রাজশাহীতে দুই আসনে জামায়াতের দুই প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

রাজশাহীর দুটি আসনে জামায়াতের দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিল করা ভোটার তালিকায় অসঙ্গতির কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা এসএম আবদুল কাদের।

রোববার সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চলছে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের তিনটির মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হয়েছে। এই কার্যক্রম চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়া জামায়াতের ওই দুই প্রার্থী হলেন-রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এবং রাজশাহী-২ (পবা-মোহনপুর) আসনে জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক কাটাখালি পৌর মেয়র অধ্যাপক মাজেদুর রহমান। নিবন্ধন হারানো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই দুই প্রার্থী সতন্ত্র হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা এসএম আবদুল কাদের জানান, এই দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিলকৃত ভোটার তালিকায় গরমিল ছিলো। যাচাই-বাছাইয়ে সেটি ধরা পড়ে। পরে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।

জানা গেছে, জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ১৯৮৬ সালে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তাছাড়া দুই মেয়াদে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং গোদাগাড়ী পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতের প্রার্থী।

দলটির নেতারা দাবি করছেন, এখানে রয়েছে জামায়াতের নিজস্ব ভোটব্যাংক। আর এ কারণেই এবারের সংসদ নির্বাচনে জোটের কাছ থেকে এই আসনটি নিয়ে দেনদরবার করছিলো জামায়াত।

এই আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক। মামলা সংক্রান্ত সার্টিফাইড কপি জমা না দেয়ায় তারও মনোনয়নপত্র আটকে গেছে যাচাই-বাছাইয়ে। তবে এই বাধা উৎরে গেছেন আমিনুল ইসলামের স্ত্রী আভা হক। তিনিও এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মনোয়নপত্র বাতিল হয়েছে বিএনিপর আরেক প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের।

১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ আসনে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হক। ২০০৮ সালে আমিনুল হকের পরিবর্তে তার ভাই পুলিশের সাবেক আইজি এনামুল হক বিএনপির প্রার্থী হন। সেই বার এনামুল হক পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে। এরপর থেকেই টানা দুই মেয়াদে এই আসনের এমপি ফারুক চৌধুরী।

যাচাই-বাছাইয়ে এরই মধ্যে ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রার্থীতা বৈধতা দেয়া হয়েছে। এই আসনে বৈধ প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন আরো দুই প্রার্থী। এরা হলেন- ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মান্নান ও ওয়ার্কার্স পার্টির রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল।

তবে বাতিল হয়েছে এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাহ উদ্দিন বিশ^াস, সাইদুর রহমান, শহিদুল কবির শিবলী ও সুজা উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। মোট ১২ প্রার্থী এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

অন্যদিকে, জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মাজেদুর রহমান ছাড়াও ভোটার তালিকার গরমিলে বাদ পড়েছেন রাজশাহী-৩ আসনে সতস্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সতন্ত্র আতিকুর রহমান। এছাড়া ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী একেএম মতিউর রহমান মন্টু ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহাবুদ্দিন বাচ্চুর।

এই আসনের বৈধ প্রার্থীরা হলেন– আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, ইসলামী আন্দোলনের ফজলুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাজ্জাদ আলী, এলডিপির মনিরুজ্জামান। রাজশাহী-৩ আসনে ১০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

নির্বাচন দপ্তর বলছে, বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলবে। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে এবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ৬৭ জন। এর মধ্যে ২৪ জন বাদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ৪৩ প্রার্থী।

বিএ-০৬/০২-১২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)