রাজশাহীতে আলোর পথ দেখাচ্ছে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

প্রতিবন্ধী আর সমাজের বোঝা নয়, সুযোগ পেলেও তারাও মানুষ হয়। এই লক্ষে দুর্গাপুর উপজেলা সদরে গুনি মানুষের উদ্যেগে দুর্গাপুরে একমাত্র প্রতিবন্ধীদের আলোর পথ দেখাচ্ছে দুর্গাপুর বুদ্ধি-শ্রবণ ও বাক নামে প্রতিবন্ধীদের এই স্কুল। শেখানো হচ্ছে ইশারার মাধ্যমে বর্ণ মালা-হাতের লেখা ইত্যাদি। তবে স্কুলটি আর দশটি স্কুল থেকে আলাদা।

এটি সমাজের চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবহেলিত বুদ্ধি-শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে স্কুল। যারা বলতে পারে না কথা, শোনতে পান না কোন কিছুই (বধির)। অবহেলিত, সমাজের বোঝা এই শিশুদের আলোর পথ দেখাতে উদ্যোগী হয়ে আক্কাস আলী ও আফরোজা দম্পতি গড়ে তোলেছেন একমাত্র প্রতিবন্ধী স্কুলটি।

রয়েছে প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণের সুযোগ। বিনে-পয়সায় প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়ানোর অসম্ভব ইচ্ছে সম্ভব করার প্রচেষ্টা থাকা দুর্গাপুরের এই প্রথম প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১২সালে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্গাপুর উপজেলা সদর হতে প্রায় ২গজ দুরে গড়ে ওঠা এ স্কুলটি উপজেলার অন্যান্য স্কুল গুলোর চেয়ে আলাদা। ঐচ্ছিক অনুদানে পরিচালিত স্কুলটিতে রয়েছে নিজস্ব ভবন। এছাড়া স্কুলটিতে বিনা বেতনে কাজ করছেন একজন প্রধান শিক্ষকসহ ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী।

বর্তমানে স্কুলটিতে ১শ ৩জন জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া ও খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে। স্কুলটিতে কেউ হাঁটতে পারে, কেউ পারে না। কারো হাত-পা বাঁকা। কেউ কথা বলতে পারে না, আবার কেউ শোনেনা। কেউ পড়ছে, কেউ খেলাধুলা ও নানা ভঙ্গিতে অভিনয় করছে। এ যেন এক বিচিত্র রূপ!

স্কুলটির শিক্ষার্থী সানি, আরাফাত, নাইম জানায়, এই স্কুলটিতে পড়তে পেরে আর তাদের খারাপ লাগে না। আগে সব সময় মন খারাপ থাকতো। এখানে এসে পড়তে পারি, খেলতে পারি, নৃত্য করতে পারি খুব ভাললাগে। সমাজের দশজনের মত তারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়।

মহসিন, আলামিন, সেলিম নামের বেশ কয়েকজন প্রতিবেশি জানান, প্রতিবন্ধী স্কুলটি প্রতিবন্ধীদের মাঝে যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সেটা যেন গোটা উপজেলার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে এটাই সবার কাম্য। উপজেলার মধ্যে একটি মাত্র স্কুল হওয়ায় ব্যাপক সারা ফেলেছে। দ্রুত স্কুলটি সরকারিকরণসহ শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তারা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্কাস আলী ও আফরোজা দম্পতি বলেন, আমাদের সন্তানও প্রতিবন্ধী। সেই থেকে সমাজের আর প্রতিবন্ধীদের আলোর পথ দেখাতে এ প্রচেষ্টা তাদের । বিনা বেতনে প্রতিদিন সমাজের অবহেলিত এসব শিশুকে পাঠদান করছি। ফলে অন্য শিক্ষকদের এবং নিজের সংসারের অভাব-অনটন লেগেই আছে। তবুও অনেক ত্যাগ স্বীকার করে প্রতিবন্ধী এসব শিশুকে আলোর পথ দেখাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন সরকার জানান, সমাজে লুক্কায়িত এবং অবহেলিত এসব প্রতিবন্ধী শিশু একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তারা দেশ ও এ অঞ্চলের সুনাম উজ্জ্বল করে আলোকিত বাংলাদেশ গড়তে পারবে। তাই আসুন তাদের পাশে দাঁড়াই। এছাড়াও যাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়, এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

বিএ-১০/০৯-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)