ভোটে ‘অনিয়মের তথ্য’ খুঁজছে রাজশাহীর বিএনপির প্রার্থীরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে অংশ নেয়া বিএনপির প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করছেন। দলের হাইকমাণ্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী আটটি ক্যাটাগরিতে তারা দলের নেতাকর্মী ও পোলিং এজেন্টদের মাধ্যমে তথ্য ও চিত্র সংগ্রহ করছেন। এছাড়াও তথ্য পেতে প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন তারা। তথ্য সংগ্রহের পর প্রার্থীরা প্রতিবেদন আকারে দলের হাইকমান্ডে জমা দেবেন বলে জানিয়েছে রাজশাহী বিএনপির একটি সূত্র।

রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির প্রার্থীরা। তারা হলেন রাজশাহী-১ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহী-২ আসনে মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী-৩ আসনে শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী-৪ আসনে আবু হেনা ও রাজশাহী-৫ আসনে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল। তবে রাজশাহী-৬ আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী ছিল না।

পাঁচটি আসনের মধ্যে একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও চারটিতে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থীরা। এর মধ্যে ব্যারিস্টার আমিনুল হক ৮৫ হাজার ৩৮১, মিজানুর রহমান মিনু ১২ হাজার ১৪৬, শফিকুল হক মিলন এক লাখ ৩০ হাজার ৫৮২, আবু হেনা এক লাখ ৭৬ হাজার ২৫৫ ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এক লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, রাজশাহীর পাঁচটি আসনে ভোটে অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করছেন প্রার্থীসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা। অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো প্রতিবেদন আকারে কেন্দ্রে জমা দেয়া হবে। এছাড়াও তথ্য সংগ্রহের পর ভোট কেন্দ্র অনুযায়ী পৃথক পৃথক মামলা করা হবে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে।

এদিকে, রাজশাহী-৩ আসনের ভোটে অনিয়মের প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। ভোটের দিন মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সংহিংসতায় নিহত মেরাজুল ইসলামকে ধানের শীষের সমর্থক ধরে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করা হচ্ছে।

এ আসনের বিএনপির প্রার্থী শফিকুল হক মিলন বলেন, মেরাজুলের ভাই হুমায়ন আওয়ামী লীগের কর্মী হলেও নিহত মেরাজুল বিএনপির সমর্থক। সে ধানের শীষের প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। যার তথ্য প্রমান আমাদের হাতে এসেছে। এছাড়াও ওই কেন্দ্রে সংহিসতার সময় একটি লাল গাড়ি থেকে গুলি ছুঁড়ার তথ্য প্রমানও আমরা পেয়েছি। সেগুলো প্রতিবেদনের সঙ্গে দেয়া হবে বলে জানান বিএনপির এই প্রার্থী।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১২০ জন প্রার্থী ইতোমধ্যেই নির্বাচনে অনিয়মের তথ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তারা নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, সহিংসতায় আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের তালিকা দিয়েছেন। একইসঙ্গে নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিন যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে তার চিত্র এবং লিখিত বর্ণনাও দিয়েছেন প্রতিবেদনে।

সূত্র জানায়, গত ৩ জানুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয় ধানের শীষের প্রার্থীদের। চিঠিতে প্রত্যেক প্রার্থীকে ৮টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচনের অনিয়মের তথ্য সাত দিনের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্রার্থীদের নিজের ও পরিবারের অবরুদ্ধ হয়ে পড়া কিংবা হামলায় আহত, সহায় সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য ও ছবি, নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় সংঘটিত অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি, সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের তাণ্ডব এবং সন্ত্রাসের একটি সচিত্র প্রতিবেদন ইত্যাদি চাওয়া হয়। সেই অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি ছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়া শেষ দিন। বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত ১২০ জন প্রার্থী সেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত রাজশাহীর কোন প্রার্থী তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন পর্যন্ত ১২০ জন প্রার্থী সেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর কারণে অনেক প্রার্থী দেরিতে চিঠি পেয়েছেন, এই কারণে সব প্রার্থী এখনও প্রতিবেদন জমা দেননি। আশা করি ১-২ দিনের মধ্যে সবাই জমা দিয়ে দেবেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সব প্রতিবেদন জমা হলে তার ওপর ভিত্তি করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। এছাড়া যেসব প্রার্থী ভিডিও চিত্র জমা দিচ্ছেন সেইগুলো একসঙ্গে করে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করা হবে। এরপর এগুলো সংবাদ সম্মেলনে করে গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে। এরপর ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হবে। এছাড়া দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে জানানো হবে।

সূত্র আরও জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব প্রার্থী নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। মামলার সময় প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনের প্রতিবেদনের পাশাপাশি ভোটের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে সব আসন নিয়ে তৈরি করা পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও জমা দেবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগে সব প্রতিবেদন জমা হোক। তারপর আমরা চিন্তা-ভাবনা করবো এইগুলো কোন কাজে লাগাবো।

বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য একজন সদস্য বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অনিয়মের ঘটনাগুলোর আংশিক অডিও ও ভিডিও গত ৬ জানুয়ারি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এখন সব প্রার্থী প্রতিবেদন জমা দিলে আবার এই নিয়ে কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হবে।

প্রসঙ্গত, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২৮১ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ২৫৬ জন। বাকিরা ছিলেন শরিক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। এরমধ্যে ধানের শীষ নিয়ে ৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।

বিএ-০৩/১১-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)