রাসিকের মেগাপরিকল্পনায় ২২ পুকুর!

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে রাজশাহী নগরীতে। দিনকে দিন নিচে নামছে এখানকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। শুকনো মৌসুমে অসহনীয় হয়ে উঠছে তাপমাত্রা। শীতে তাপমাত্রার পারদ নামছে তলানিতে। মরুময়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মার তীরবর্তী বিভাগীয় এই শহর।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুকনো মৌসুমে পদ্মায় প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। তাছাড়া অব্যহতভাবে ভরাট হচ্ছে পুকুর। নগরবাসীর পানীয়জলের যোগান আসছে ভূ-গর্ভ থেকে। এরই প্রভাব পড়ছে এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের উপর।

বিষয়টি ভাবিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকেও (রাসিক)। আর তাই ব্যক্তিমালিকানাধীন এখানকার ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের মেগাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নগর সংস্থা। ২০১৩ সালে ১৬টি পুকুর নিয়ে এমনই একটি পরিকল্পনা নেন তৎকালীন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

তখন প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিলো ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু নেতৃত্বের দক্ষতার অভাবে সেটি মুখ দেখেনি আলোর। সম্প্রতি পুরনরায় রাসিক মেয়র নির্বাচিত হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এবার বিশেষ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছেন মেয়র।

নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৩ সালে প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিলো ২০৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চারটি পুকুর বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে জমির দাম। ফলে প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯৫ কোটিতে।

নতুন ওই প্রকল্পেও সংরক্ষণের পাশাপাশি নানান অবকাঠামো নির্মাণ করে পুকুরগুলোকে পার্কের আদলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে রাসিক।

এই ২২ পুকুরের মধ্যে রয়েছে- নগরীর কাঁঠালবাড়ীয়া গাই পুকুর, হড়গ্রাম রাণীদিঘী, মুন্সিপাড়া মসজিদের পশ্চিমের পুকুর, দাঁশপুকুর ওয়ার্ড কার্যালয়ের উত্তর পাশের পুকুর, মহিষবাথান দিঘী মসজিদের দক্ষিণ পাশের পুকুর, কাজিহাটা নিস্কৃতি ক্লিনিকের পূর্ব পাশের পুকুর, কাদিরগঞ্জ শহীদ নজমুল হক স্কুলের উত্তর পাশের পুকুর, গৌরহাঙ্গা মসজিদের পশ্চিশ পাশের পুকুর, উপশহর মার্কাজ মসজিদের পূর্ব পাশের পুকুর, সপুরা শুকনা দিঘী, সপুরা ছঘাটি সড়কের পশ্চিম পাশের পুকুর, নওদাপাড়া তালপুকুর দিঘী, ছোটবনগ্রাম মাঝিপুকুর, সাগরপাড়া কাইউম ডাক্তারের দিঘী, মেহেরচন্ডি বড় দিঘী, মেহেরচন্ডি শুকনা দিঘী, মেহেরচন্ডী গজারী দিঘী, রামচন্দ্রপুর তারান বাবুর পকুর, ভদ্রা স্মৃতি অম্লুানের পূর্ব পাশের পুকুর, কাজলা বড় দিঘী, মোহনপুর জেবের মিয়ার পুকুর এবং শিরোইল মটপুকুর মটের দক্ষিণ পাশের পুকুর।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের যাচাই কমিটির সভায় অনুমোদিত হয় আগে প্রকল্পটি। পুর্নগঠিত ডিপিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের হাত ঘুরে পরিকল্পনা কমিশনেও যায়। কিন্তু চুড়ান্ত অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

রাসিক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, আগের প্রকল্পটি সংশোধন করে নতুন এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন শেষে প্রকল্পটি এখন পরিকল্পনা কমিশনে। এরই মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইও হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২১ সালের মধ্যেই।

পরিবেশবাদি সংগঠন রাজশাহী হেরিটেজের তথ্যানুযায়ী, রাজশাহী নগরীতে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে পুকুর রয়েছে দুই শতাধিক। ৬০ এর দশকে এ সংখ্যা ছিলো চার হাজার ২৩৮। ১৯৮১ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭১ এ। আর ২০০০ সালে এই সংখ্যা নেমে আসে ৭২৯টিতে।

রাজশাহী হেরিটেজের করা এক রীটের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালে নগরীতে পুকুর ভরাট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। তা সত্ত্বেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা একের পর এক পুকুর ভরাট করে গড়ে তুলছেন বহুতল ভবন। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ হুমকিতে পড়ছে, তেমনি বাড়ছে ভুমিকম্প ঝুঁকিও।

বিএ-০৭/১৫-০১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)