যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে সিগারেটসহ তামাকপণ্যের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশে এক প্যাকেট বেনসন (২০ শলাকা) সিগারেটের দাম ২২০ টাকা। অথচ তামাকের বহুজাতিক কোম্পানির দেশ যুক্তরাজ্যে এক প্যাকেট সিগারেটের মূল্য ১৮ পাউণ্ড বা প্রায় ২ হাজার টাকা। কাজেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও উচ্চহারে সকল ধরনের তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে যুগোপযোগী এবং কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন বক্তারা এ দাবি জানান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিশেন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র সম্মেলন কক্ষে ‘কেমন তামাক-কর চাই’ শীর্ষক এ প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসিডি’র আয়োজনে এবং ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকে’ এর সহায়তায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন- ‘তামাকমুক্ত’ রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ওয়াসীম মো. মেজবাহুল হক।
রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদের সভাপতিত্বে এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন- এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক (ইডি) সালীমা সারোয়ার।
এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন, এসিডি’র মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুল।
এসময় ‘এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক শরীফ সুমন, সদস্য ড. আইনুল হক, আহসান হাবীব অপু, পরিতোষ চৌধরী আদিত্যসহ স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ওয়াসীম মো. মেজবাহুল হক বলেন, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধির দাবিটি সরকারের দৃষ্টিগোচর করা। তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি তামাককে নিরুৎসাহিত করণের একটি স্ট্র্যাটিজি। এছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টিও আরেকটি স্ট্র্যাটিজি। কাজেই তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধি ও জনসচেতনার মাধ্যমেই মূলত তামাকের ব্যবহার কমানো সম্ভব।’
সভাপতির বক্তব্যে কাজী শাহেদ বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্যে (ইউনাইটেড কিংডম) গিয়ে দেখেছি, সেখানে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশে এক প্যাকেট বেনসন সিগারেটের সর্বোচ্চ দাম মাত্র ২২০ টাকা। সিগারেটের বহুজাতিক কোম্পানির দেশ যুক্তরাজ্য। অথচ সেই দেশে এক প্যাকেট সিগারেটের দাম এতো বেশি। কাজেই আমাদের দেশেও উচ্চহারে তামাকের কর বৃদ্ধির পাশাপাশি পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, ‘তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষায় আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে তামাকজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দেশে অকাল মৃত্যুর মিছিল বন্ধে আগামী ২০১৯-২০ বাজেটে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ২টিতে (নিম্ন এবং উচ্চ) নিয়ে আসা। অর্থাৎ ৩৫ টাকা এবং ৪৮ টাকা এই দুইটি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা মূল্যস্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা।
নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও সকল ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া।
অর্থাৎ বিড়ির মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক এবং ৪.৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। তিন. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করা এবং চার. সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য থাকবে।
এসময় লিখিত বক্তব্যে সকল তামাকপণ্যে ‘খুচরা মূল্যের’ (MRP) ভিত্তিতে করারোপ; বিভিন্ন তামাকপণ্য ও ব্রান্ডের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারকারীর ব্রান্ড ও তামাকপণ্য পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করা; করারোপ প্রক্রিয়া সহজ করতে তামাকপণ্যের মধ্যে বিদ্যমান বিভাজন তুলে দেয়া; সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে সরকারের করজালের আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়।
বিএ-১০/২৭-০৪ (নিজস্ব প্রতিবেদক)