কারাভোগের দেড়মাস পর ডাব বিক্রেতা সজলকে অব্যাহতি, ওসিকে শোকজ

রাজশাহীতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় বড়ভাই সেলিম ওরফে ফজলের পরিবর্তে দেড় মাস কারাগারের অন্ধকারে কাটলো নির্দোষ সজল মিয়ার (৩৪)।

বুধবার বেলা তিনটার দিকে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালর (প্রথম) বিচার মো. মনসুর আলম জনাকীর্ণ আদালতে এই আদেশ দেন।

আসামি না হয়েও কেন সজল গ্রেফতার হয়েছিলেন- এই বিষয়ে নগরীর শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম মাসুদ পারভেজকে জবাব দিতে বলেছেন আদালত। আগামী সাত দিনের মধ্যে আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে জবাব দেবেন ওসি।

পেশায় ডাব বিক্রেতা সজল নগরীর ছোটবনগ্রাম পশ্চিমপাড়া মহল্লার তোফাজ উদ্দিনের ছেলে। তার বড় ভাই সেলিম ওরফে ফজলকে ২০০৯ সালে থাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালক। রায় ঘোষণার আগে থেকেই পলাতক ফজল।

শুনানী চলাকালে আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন নির্দোষ সজল। পরে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। হাঁসিমুখেই কারাগারে গেছেন সজল।

গত ৩০ এপ্রিল শাহমখদুম থানা পুলিশ সজলকে ফজল দাবি করে গ্রেফতার করে আদালতে তোলে। ওই সময় আদালতকে সজলকে ফজল বলেই জানায় পুলিশ। দুইজন সাক্ষীর দেয়া হলফ নামার প্রেক্ষিতে ওই দিনই নির্দোষ ফজলকে জেলহাজতো নেয়া হয়।

তবে ফজল নির্দোষ দাবি করে গত ২৬ মে তার আইনজীবী আদালতে মুক্তির আবেদন জানান। গত মঙ্গলবার ওই আবেদনের শুনানির দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু এক দিন পর আদালত বসায় বুধবার ওই আদেশের শুনানী হয়।

আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০১ সালে আসামি ফজলের বয়স ছিল ২৭ বছর। বর্তমানে তার বয়স হবে ৪৫ বছর। কিন্তু সজলের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। এছাড়া আসামি ফজল মামলার রায়ের আগে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তখন তার শারিরীক গঠন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে সংরক্ষণ করা হয়।

এখন আবার পর্যাবেক্ষণ করে দেখা যায়, গ্রেফতার সজলের সঙ্গে সে বর্ণনার উল্লেখযোগ্য তারতম্য রয়েছে। পুলিশ ভুল করে তাকে ফজল ভেবে গ্রেফতার করেছে।

বুধবার আদালতে হলফনামা দাখিল করেন সজলের অন্য ছয় ভাই-বোন। তারা জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ফজল দীর্ঘ দিন ধরেই নিখোঁজ। তারা ফজলের কোনো খোঁজ জানেন না। তিনি বেঁচে আছেন কি না তারা সেটিও জানেন না।

আর ফজল হিসেবে পুলিশ যাকে গ্রেফতার করেছে তিনি সবার ছোটভাই সজল। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সজলকে দায়মুক্তি দেন আদালত।

সজলের আইনজীবী মোহন কুমার সাহা বলেন, অপরাধী না হয়েও সজল কয়েদি হিসেবে সাজা ভোগ করেছেন। তার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। ওসির শোকজের জবাব পাওয়ার পর আদালত এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত দেবেন সেটির জন্য আমরা অপেক্ষা করব।

আদালতে উপস্থিত সজলের ভাই মো. বাবু বলেন. সজলকে গ্রেফতারের পর আমরা ওসিকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো কথা শোনেননি। ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েও হয়রানি করেছেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফফর হোসেন বলেন, নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর জন্য ওসির শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে দুজন সাক্ষী ওসিকে এফিডেফিট করে দিয়ে বলেছিলেন, এটাই আসামি। তাই ওসির জবাবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আদালতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

বিএ-০৯/১২-০৬ (নিজস্ব প্রতিবেদক)