সাংবাদিক রফিকুলের উপরে হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন

দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলামের উপরে হামলার সুষ্ঠ তদন্ত করতে হবে। এই হামলা পরিকল্পিত। হামলাকারীদের রিমান্ডে নিয়ে সত্য ঘটনার উদঘাটন করতে হবে। এনিয়ে বিভাগীয় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু সাংবাদিক রফিকুল ইসলামের উপরে হামলার অর্থ পুরো রাজশাহীর সাংবাদিকদের উপরে হামলা চালানো।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর আলুপট্টিতে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা এসব কথা বলেন। মানববন্ধনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে কর্মরত সাংবাদিক এবং কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার সকাল ১০ টার দিকে রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট সংলগ্ন থিম ওমর প্লাজার নিরাপত্তা কর্মীরা এমপি ওমর ফারুকের হুকুমে হামলা চালায় সাংবাদিক রফিকুল ইসলামের উপরে।

মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে সভাপতির বক্তব্য দেন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ। তিনি বলেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী প্রকাশ্যে রাজশাহীতে কর্মরত পাঁচজন সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তার মধ্যে রফিকুল ইসলামও ছিলো। একটি মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে যে হামলা চালানো হয়েছে তা স্পষ্ট পরিকল্পিত।

দৈনিক সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক লিয়াকত আলী বলেন, রফিকুলের উপরে হামলাটি পরিকল্পিত। একজন সাংবাদিকের উপরে হামলা চালানোর বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক। এটি বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। এই থিম ওমর প্লাজা কিভাবে তৈরি হলো তা অনুসন্ধান করে বের করতে হবে। থিম উমর প্লাজার নির্মাণে সঠিক কোড মানা হয়নি।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ বলেন, একদল সন্ত্রাসী জেনে বুঝে হামলা চালিয়েছে। আজ রাজশাহীর সাংবাদিকরা ঐক্যবন্ধ। যারা এই হামলা চালিয়েছেন তারা এসে দেখে যাক, রাজশাহীর কত সাংবাদিক আজ রাস্তায়।সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে লাভ নেই, চোখ রাঙিয়েও লাভ নেই। এসব করলে সব সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে কলম দিয়েই এর প্রতিবাদ জানাবে।

রাজশাহী ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা জাবিদ অপু বলেন, রাজশাহী শহরে চলছে উচ্ছেদ অভিযান। এই অভিযানে শুধু গরিবদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা বা ফুটপাতের জায়গা দখল করে যারা বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করেছে তাদের কিছু বলা হয়নি। ওই সব বিল্ডিংগুলো তুলে দিতে হবে বলে রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাধরদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, রাজশাহীর সাংবাদিকদের মারধর ও হত্যা করে কলম বন্ধ করা যাবে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, যারা এই মামলাটি করেছে তারা সাংবাদিক বা পাবলিক ভেবে হামলা করেনি। তারা জেনেই এই হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে একটি ধারণা সাংবাদিকদের মারলে কোন বিচার হয় না। এক থেকে দুইদিন মানববন্ধন এর বেশি কিছু হয় না। রাজশাহীর সাংবাদিকের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সাংবাদিক শিবলী নোমান বলেন, সাংবাদিকরা গণমানুষ থেকে বিচ্ছন্ন নয়। গত কয়েকদিন আগে রাবির কয়েজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে থিম ওমর প্লাজার নিরাপত্তা কর্মীরা। রফিকুল সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও তার ওপরে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে এই সাংবাদিকরা বাংলাভাইদের বিতাড়িত করার জন্য তাদের যে ভূমিকা রেখেছে তা সবাই জানে। এই সংবাদিকদের কারণে বাংলাভাইয়েরা রাজশাহীতে টিকতে পরেনি। এখনও সময় আছে সাংবাদিকদের নাড়তে আসবেন না। চামড়া তুলে দেবো।

রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান শ্যামল বলেন, আমি শুনেছি, এমপি ফারুকের যে নিরাপত্তা কর্মীরা হামলা চালিয়েছে তাদের বিতাড়িত করেছেন। রাজশাহীতে যে সকল সাংবাদিকদের উপরে হামলা করা হয়েছে। তার সবগুলোই পরিকল্পিত।

মানববন্ধন পরিচালনা করেন, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক। তিনি বলেন, সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলে গোলাম মাওলা রনি, জয়নাল হাজারী ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। এখন ওমর ফারুক চৌধুরী কলম সৈনিকদের হুমকি দিচ্ছেন। তার উদ্দেশ্যে বলি, চোখ রাঙাবেন না। আমরা ভয় পাই না। চোখ রাঙালে আপনারও পরিণতি ভালো হবে না।

ঘন্টাব্যাপি এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত সাংবাদিকরা এই হামরার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

এসএইচ-২৩/১১/১৯ (নিজস্ব প্রতিবেদক)