অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাতের পরও বহাল বিএমডিএ’র দুই প্রকৌশলী

চেক জালিয়াতির মাধ্যমে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রায় ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছিলো দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের তদন্তেও তাদের সম্পৃক্ততা উঠে আসে।

তারপরও এখনো বহাল প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও জিএফএম হাসনুল ইসলাম। এর আগে দুই দফা তদন্ত করে এই দুজনের সম্পৃক্ততা পায় বিএমডিএর তদন্ত কমিটি।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন নওগাঁর আত্রাই এবং জিএফএম হাসনুল ইসলাম রাজশাহীর মোহনপুরে বিএমডিএ কার্যালয়ে কর্মরত।

বিএমডিএর গোদাগাড়ী জোন-২ কার্যালয়ের এই কাণ্ডে সহকারী হিসাব রক্ষক মতিউর রহমান ও সহকারী কোষাধ্যক্ষ খাবিরুদ্দিনও জড়িয়েছেন। এই দুজনসহ চার জনের নামেই মামলা দায়েরের সুপারিশ করেছিলো কৃষি মন্ত্রনালয়। সেই সুপারিশও বাস্তবায়নি করেনি বিএমডিএ।

জানা গেছে, ১৮১টি চেক টেম্পারিং করেছিলেন এই চারজন। ১৫৪টাকার চেক টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে ৮৯হাজার ১৫৪টাকা, ৪৫০টাকার চেক করা হয়েছে এক লাখ ৪৫০টাকা ও ৬২১টাকার চেকে লেখা হয়েছে এক লাখ ৬২১টাকা।

এভাবেই ২০১১-২০১২ অর্থবছর হতে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ৫৮লাখ ১২হাজার ৩২১টাকা। তবে চেকের মুড়ির অংশগুলোতে ঠিকঠাক রয়েছে প্রকৃত টাকার অংক। জালিয়াতি ঢাকতে গোদাগাড়ী জোন-২ কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে নথিপত্র পড়িয়ে দেয় চক্রটি।

ঘটনা গুরুতর হওয়ায় প্রথমে বিএমডিএ দু দফা তদন্ত করে। পরে অধিকতর তদন্ত করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। কৃষি মন্ত্রনাণয়ের ৬৫৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে জালিয়াতিতে এই চার জনের সম্পৃক্ততা উঠে আসে। এরপর অভিযুক্ত চার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে কমিটিগুলো।

এ ঘটনায় ২০১৭সালের জানুয়ারিতে অভিযুক্ত খাবিরুদ্দিন ও মতিউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু কিন্তু অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন ও জিএফএম হাসনুল ইসলাম এখনো বহাল তবিয়তে।

বিএমডিএ’র অডিট অফিসার শ্রী বাসুদেব চন্দ্র মহন্ত জানিয়েছেন, চেক টেম্পারিংয়ের প্রমাণাদি ধ্বংষ করতে খাবিরুদ্দিন আগুন লাগিয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে তিনটি তদন্ত কমিটির রিপোর্টেই। প্রথম টেম্পারিং করেছিল মতিউর। এরপর খাবিরুদ্দিন।

অভিযুক্ত খাবিরুদ্দিন ও মতিউর রহমান তদন্ত কমিটিগুলোর কাছে নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন। তবে তাদের দাবি, এর পেছনে ছিলেন তৎকালীন দুই সহকারী প্রকৌশলীও।

এবিষয়ে মতিউর বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে আমাকে শাস্তি দিয়ে এক রকম ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমি এর নিষ্পত্তি চাই। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছি।

তার দাবি, তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলীর নির্দেশেই তিনি একাজ করেছিলেন। তিনি সেই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। খাবিরুদ্দিনের দাবিও প্রায় একই।

তবে এধরণের ঘটনার পরও পিএফ ফান্ড থেকে খাবিরুদ্দিনকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে বিএমডিএ। সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরও কীভাবে ঋণ পেলেন তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

তবে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত না হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অ্যাকশন নেয়া হয় নি। এছাড়া খাবিরুদ্দিন ঋণ বরখাস্ত হওয়ার আগেই ঋণের আবেদন করেছিল। তাই ঋণ পেয়েছে।

বিএ-০৫/১৪-০৯ (নিজস্ব প্রতিবেদক)