রাজশাহীতে ৩৫কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করতে দুই হাজার গাছ উজাড়

রাজশাহীতে ৩৫কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে উজাড় করা হয়েছে দুই হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সাত বছর আগের দামে মূল্যবান এসব গাছ বিক্রি করে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। যদিও গাছ কাটার পক্ষে মত দেয়নি স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে জেলার কাঁকনহাট হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্ত করা হবে।

পুরো রাস্তায় রয়েছে প্রায় দুই হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। সওজ ছাড়াও এসব গাছের মালিকানা রয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), সামাজিক বন বিভাগ এবং জেলা পরিষদের।

এরই মধ্যে বিএমডিএ ৭৯০টি এবং সওজ ৬৬৩টি গাছ কেটে নিয়েছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২৫জন করে শ্রমিক গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এরই মধ্যে প্রায় সব গাছ সাবাড় হয়ে হয়েছে।

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় বৃক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুণ্ডু বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সঙ্গে সভা করে জানতে চাওয়া হয়েছিলো এই সড়কে থাকা গাছগুলোর মালিকানায় কারা আছেন।

কোন বিভাগের কতটি গাছ রয়েছে সেটিও জানার চেষ্টা করেছেন তারা। পরে গাছের বিপরীতে যারা প্রমাণ দেখাতে পেরেছেন তারাই গাছ পেয়েছেন।

এদিকে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সড়কে তাদের কোনো গাছ নেই। তবে এলজিইডির রয়েছে। এলজিইডির পবা উপজেলা কার্যালয় থেকেও জানানো হয়েছে, গাছে তাদের অংশীদারিত্ব নেই।

তবে জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার আলী হোসেন বলেন, তারা মাত্র ১৪টি গাছের কাগজপত্র দেখাতে পেরেছেন। তাই ওই সংখ্যক গাছ তারা কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কিন্তু জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার গাছের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। এবিষয়ে তার দপ্তর থেকেও তাকে অবহিত করা হয় নি বলেও জানান চেয়ারম্যান।

এদিকে, এসব গাছ বিক্রি করা হয়েছে ২০১২সালের ১৬ এপ্রিল সওজ এর প্রধান বৃক্ষপালনবিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সার্ভে মূল্য তালিকা অনুযায়ী। কিন্তু এই সাত বছরে এসব গাছের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ।

গাছ কাটতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নেয়ার বিয়ষটি স্বীকার করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় বক্ষপালনবিদ বিপ্লব কুণ্ডু।

জানতে চাইলে রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মামুন অর রশিদ জানিয়েছেন, ওই সড়কের গাছ কাটতে তাদের কোনো মতামত চাওয়া হয় নি।

এদিকে, উন্নয়নের নামে গাছ উজাড়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা। সংগঠনটির রাজশাহী শাখার সভাপতি মো. জামাত খান বলেন, আমরা উন্নয়নবিরোধী নই। প্রধানমন্ত্রীও গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

কিন্তু এরপর নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছেই। লাভবান হতে একশ্রেণীর কর্মকর্তা সব সময় তৎপর-এমন অভিযোগ করেন জামাত খান।

বিএ-১৬/২০-০৯ (নিজস্ব প্রতিবেদক)