ভ্যানচালকের ছেলে থেকে কোটিপতি ‘টেন্ডার মানিক’!

রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে অনেকেই দল বদল করে ফেলেন। তেমনি একজন বিএনপিকর্মী মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক। ‍যিনি ছিলেন রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট শাখার ছাত্রদলের নেতা ছিলেন।

দরিদ্র ভ্যানচালকের পরিবারে পরিবারে জন্ম হলেও নিজ রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা তিনি আজ কোটিপতি। যিনি আজ রাজশাহী মহানগরীতে ‘টেন্ডার মানিক’ নামে পরিচিত।

জানা যায়, ক্ষমতার রূপান্তরের সাথে সাথে মানিকও তার রূপ পরিবর্তন করে ফেলেন। বর্তমানে তিনি মতিহার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। বর্তমানে তিনি সার্ভেয়ার পদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত রয়েছেন।

রুয়েটে বড় বড় কাজের ঠিকাদারী করেন নামে-বেনামে। এখন সেই মানিক-ই বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক। নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়ি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিহার থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানিয়েছেন, রাবিতে চাকরি করলেও তিনি দিনের বেশী সময় কাটান রুয়েট প্রাঙ্গনে। অভিযোগ করে তিনি জানান, সরকারি আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক ।

যদিও সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৯ এর ১৭ ধারায় বলা আছে, ‘কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোন ব্যবসায় জড়িত হতে অথবা অন্য কোন চাকরি বা কাজ গ্রহণ করতে পারবেন না।’

খোজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকার বিএনপি কর্মী মনোয়ার হোসেনের ছেলে মানিক রাজশাহী সার্ভে কলেজে এক সময় ছাত্রদলের দাপুটে নেতা ছিলেন। তিনি বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মানিক তৎকালিন মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরে ছাত্রলীগে ভিড়েন। এর পর তিনি বাগিয়ে নেন মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার আর্শীবাদে অনেক ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে পেছনে ফেলে রাতারাতি টেন্ডার মানিক হয়ে যান মতিহার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

রুয়েটের প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে টেন্ডার মানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিজেই রুয়েটের প্রায় ৭২ লাখ টাকার ছয়টি কাজ করছেন। এর মধ্যে রয়েছে আইকন এন্টারপ্রাইজের নামে ৩৫ লাখ ১৮ হাজার, মেসার্স জনি ট্রেডার্সের নামে ছয় লাখ ২৬ হাজার, মেসার্স মাবরুকা ট্রেডার্সের ১২ লাখ ৭৩ হাজার, বসুন্ধরা এন্টারপ্রাইজের নামে ১১ লাখ ৭০ হাজার ও মুক্তার হোসেনের নামে পাঁচ লাখ ৮২ হাজার টাকার। টেন্ডার ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এ কাজগুলো হাতিয়েছেন টেন্ডার মানিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের এক ঠিকাদার জানান, টেন্ডার মানিকের পার্টনার রয়েছেন রুয়েটের দুই কর্মকর্তা। এছাড়াও, রুয়েটের গবেষনা ও সম্প্রসারণ বিভাগের সহকারি রেজিষ্টার ও অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুফতি মো: রনি এবং রুয়েটের সহকারি প্রকৌশলী, রুয়েট অফিসার্স সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হারুন-অর-রশিদ।

তিনি আরো জানান, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও প্রশাসনকে জিম্মি করে রুয়েটের এই দুই কর্মকর্তা টেন্ডার আহবান ছাড়াই সরকারি নিয়ম নীতি লঙ্ঘনের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়মের দ্বারা টেন্ডার ডাকেন। এ দুই কর্মকর্তা মানিকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার কাজ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। রুয়েটের এই সিন্ডিকেটটি চাকুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন ঠিকদারের বিভিন্ন নামের লাইসেন্স ব্যবহার মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদার।

সম্প্রতি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উপকরণের জন্য ৩৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। একনেক সভায় “রুয়েটে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প” নামের এই উন্নয়ন প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

এই প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের তিনটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ইনস্টিটিউট ভবন, একটি করে ছাত্র-ছাত্রী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল পাঁচতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ, একটি শিক্ষক কোয়ার্টার, একটি শিক্ষক ডরমেটরি, একটি অফিসার্স কোয়ার্টার, একটি স্টাফ কোয়ার্টার, মেডিক্যাল সেন্টার ভবন ও উপাচার্যের বাসভন নির্মাণ করা হবে।

এই প্রকল্পের আওতায় ১৩ টি ভবন নির্মাণ করা হবে য়ার ১১ টি হবে ১০ তলা বিশিষ্ট। রুয়েটের এই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সরকারি নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে বিভিন্ন ভাবে তৎপরতায় রয়েছেন টেন্ডার মানিকের নেতৃত্বে এই প্রভাবশালী টেন্ডার সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমার নামে কোনো ঠিকাদারী লাইসেন্স নেই। আমি কোনো ঠিকাদারি কাজের সঙ্গেও জড়িত নই। তবে চাকরির আগে বিএমডিএতে ঠিকাদার জাকারিয়া নামে এক ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ করতাম।

আর হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি জড়িত নই। ঠিকাদার কাজও আমি করি না। আমাদের বিরুদ্ধে এসব রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ষড়যন্ত্র । তাছাড়া তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ আমাদের অহেতুক ফাঁসানোর চেষ্টা করছে, যার কোনো প্রমাণ নেই।

বিএ-১৬/২৯-০৯ (নিজস্ব প্রতিবেদক)