সেই জামায়াত নেতার অবৈধ নিয়োগ তদন্তেও গড়িমশি

মাত্র ১০ মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুর একে ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন গোলাম কবির আখতার জাহান।

স্থানীয় এই জামায়াত নেতার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ বিধি বর্হিভূত। সেই নিয়োগের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে এখন তিনি বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক।

অবৈধভাবে প্রায় ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন গোলাম কবির আখতার জাহান। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের হাত ধরে এখন তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এরপর থেকেই জড়িয়েছেন নানান অপকর্মে। তবে এসব অভিযোগ তদন্তে গড়িমশি শুরু করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে উচ্চ আদালতে রীট করেছেন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক। সর্বশেষ এনিয়ে ওই শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলে।

এরপর গত ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলমকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করে চিঠি দেন।

ওই চিঠিতে সরেজমিন তদন্ত করে প্রমাণকসহ জরুরীভিত্তিতে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ ছিলো। কিন্তু সাত দিনের সেই তদন্তকাজ ১৯ কর্মবিদসেও শেষ করেননি তদন্ত কর্মকর্ত।

এনিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলমের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এজন্য তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে গড়িমশি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর দু-দাফা বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম। প্রত্যেক বারই তিনি প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে অভিযোগকারীকে হুমকি-ধামকি দেন। শেষ পর্যন্ত সাদা কাগজেও সই নেন অভিযোগকারীর।

অভিযোগকারী আবু বকর সিদ্দিকের অভিযোগ, তদন্ত করতে এসে প্রত্যেকবারই দুলাল আলম তার উপরই চড়াও হয়েছেন। অভিযোগ করায় চরম ক্ষুদ্ধ হয়েছেন তিনি। অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দিয়েছেন। অভিযোগ না তুললেৎ চাকরি চ্যুত করার ভয় দেখিয়েছেন।

ওই শিক্ষক আরো বলেন, অভিযোগ তদন্ত না করে উল্টো অভিযোগকারীর নিয়োগ সংক্রান্ত কাগপজপত্র নিয়ে দু দফা নিজ দপ্তরে ডেকেও পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাবার পরও তিনি হুমকি দিয়েছেন।

মামলা তুলে নিতে নানানভাবেও চাপ প্রয়োগ করছেন। এনিয়ে বিদ্যালয় পরিচালকা কমিটি এবং প্রধান শিক্ষকও তাতে নানানভাবে হুমকি দিচ্ছেন। ন্যায় বিচার ও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েও সন্দিহান এই শিক্ষক।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম। তিনি দাবি করেছেন, চিঠি পাবার পরই তিনি বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। তদন্ত করেও এসেছিন সরেজমেনি। তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে সময়মতই।

কিন্তু সেই প্রতিবেদন এখনো পাঠাতে পারেন নি। তবে করে সেই প্রতিবেদন পাঠাবেন সেটিও নিশ্চিত করতে পারেননি শিক্ষা কর্মকর্তা। সাত দিনের তদন্তকাজ কবে নাগাদ শেষ হবে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি দুলাল আলম।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, সুনির্দৃষ্ট অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দ্রুত তদন্ত শেষ করতে তাগাদাও দেয়া হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তাকে। কিন্তু তার পরও তিনি প্রতিবেদন দেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন উপপরিচালক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালের ১১ এপ্রিল সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান গোলাম কবির আখতার জাহান। এরপর দশ মাসের অভিজ্ঞতায় ২০০২ সালের ১০ এপ্রিল তিনি একই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন।

বিধি অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের দুই বছর শিক্ষানবীশকাল। সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু শিক্ষানবীশকাল পুরণ হবার আগেই সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়ে যান গোলাম কবির। এর পরের এগারো বছর ছয় মাস অভিজ্ঞতা দেখিয়ে গত ২৫ মে প্রধান শিক্ষক হন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, তার সবক’টি নিয়োগই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং মাধ্যমিক ও জেলা শিক্ষা দপ্তরকে ম্যানেজ করে। তবে বরাবরই নিজের নিয়োগ বৈধ বলে দাবি করে আসছেন গোলাম কবির আখতার জাহান। উল্টো তিনি অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন।

জানা গেছে, গোলাম কবির আখতার জাহান উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের-এলাকার মৃত শাহজাহানের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত। তৎকালীন সরকারী বিরোধী আন্দোলনেও অংশ নেন এই জামায়াত নেতা। গোদাগাড়ীতে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অর্থের যোগানদাতাও তিনি।

এরই প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। পরে এখনকার বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফুল আলমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন প্রধান শিক্ষক। এরপরই ওই মামলা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

বিএ-১৩/০৬-১০ (নিজস্ব প্রতিবেদক)