`আমরা জাতিগতভাবে মদ্যপ না’, গুলির প্রশ্নে বিএসএফকে বিজিবি

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রচার করছে, রাজশাহী সীমান্তে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে ডেকে এনে গুলি করেছে বিজিবি।

এই বক্তব্য বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন বিজিবির রাজশাহী ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ । ডেকে এনে গুলি করে মেরে ফেলার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাতে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, পতাকা বৈঠকেও এই ধরণের কথা বিএসএফ কমান্ট্যান্ট আমার কাছেও বলার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমরা তাদের ডেকেছিলাম। তাই তারা এসেছিলেন।

ওই বিএসএফ কর্তাকে তিনি বলেন, আমাদের কেউ ড্রাঙ্ক না। আমরা জাতিগতভাবে মদ্যপ না। আমরা মানসিকভাবে সবাই সুস্থ। একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটানোরমত ঘটনা ঘটাইনি। এটি পুরোপরি বানোয়াট তথ্য।

পতাকা বৈঠকে ডেকে বিএসএফকে গুলির দাবি ভিত্তিহীন উল্লেখ করে এই বিজিবি কর্তা বলেন, পতাকা বৈঠকের প্রশ্নই আসেনা। এ ক্ষেত্রে কিছু আনুষ্ঠানিকতার বিষয় আছে। আগে যেটা হয়েছে সেটা পতাকা বৈঠক না।

পতাকা বৈঠক হলে এতোকিছু হবার সুযোগ ছিলোনা। স্বাধীনতার পর থেকেই পতাকা বৈঠক হয়ে আসছে। তাছাড়া বিজিবির বয়স প্রায় আড়াইশ বছর। এটি পুরাতন বাহিনী। এমন ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই।

তিনি যোগ করেন, একটিই প্রতাকা বৈঠক হয়েছে। কমান্ডার পর্যায়ের ওই পতাকা বৈঠক হয়েছে বিকেল পৌনে ৫টা থেকে ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। দুই বাহিনীর মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে বৈঠক শেষ হয়েছে।

রাজশাহী বিজিবি পরিচালক বলেন, হঠাৎ করেই তারা (বিএসএফ) চলে এসেছিলো। তখন তাদের জানানো হয়, আমরা পতাকা বৈঠকের মাধ্যম আনুষ্ঠানিতভাবে আটক জেলেকে হস্তান্তর করবো। আপনারা অপেক্ষা করেন, আমাদের অফিসাররা আসছেন।

এটি শুনে হয়তো তারা ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের জেলেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। প্রথমে তারা ওই জেলেকে মারধর করে। এসময় আমরা তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করি। কারণ-আমরা কখনো ভারতীয় নাগরিকদের নির্যাতন করিনা। নিজেরা নির্যাতন করে তারা এর দায় আমাদের উপর চাপাতে পারে।

তিনি বলেন, তারা (বিএসএফ) অপ্রস্তুতভাবে এসেছিলো। দ্রুত প্রস্থানের সময় তারা গুলি চালাতে শুরু করে। আমাদের সাথে বেসামরিক লোকজনও ছিলেন। সবাই বিচলিত হয়ে পড়েন। পরে আত্মরক্ষায় আমাদের লোকজন তাদের উপর গুলি ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।

সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক বলেন, দুই বাহিনীর মধ্যে, বিশেষ করে আমাদের সীমান্ত এলাকায় কোন ধরণের উত্তেজনা নেই। আতঙ্কিত হবার মত কোন বিষয় নেই। আমরাও চাই না ছোটভাটো এমন বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হোক।

দুপক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, বিষয়টি আমরা তদন্ত করবো। আগামীতে সর্তকভাবে চলতে যা যা করা দরকার আমরা করবো। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, দুই বাহিনীর মধ্যে যে সম্পর্ক বিরাজ করছিলো তা বজায় থাকবে।

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে চারঘাটের পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনা শাহরিয়ার খাল এলাকায় অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় জেলে প্রণব মণ্ডলকে আটক করে বিজিবি।

ওই সময় প্রণবসহ তিন জেলে পদ্মায় কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে নেমে তাদের পায় বিজিবি ও মৎস দপ্তরের অভিযানিক দল।

ওই সময় দুই জেলে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়েন প্রণব। জব্দ করা হয় মাছ শিকারের চার কেজি কারেন্ট জাল।

ওই জেলেকে পদ্মার এপারে আনার পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে চার বিএসএফ সদস্যরা।

আটক জেলেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে বিজিবি সদস্যদের উপর চালায় বিএসএফ সদস্যরা। আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায় বিজিবি।

বিকেলে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দাবি করেছে, ওই গুলিতে এক জওয়ান নিহত হয়েছেন। তাদের আরেক জওয়ান হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে বিষয়টি জানতোনা বিজিবি।

অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে বেআইনীভাবে মাছ শিকারের দুটি মামলায় শুক্রবার বিকেলে আটক প্রণব মন্ডলকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

বিএ-০৭/১৮-১০ (নিজস্ব প্রতিবেদক)