তদবির আর ঘুষ খাওয়া একই, ধরা হবে উভয়কেই

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, তদবির আর ঘুষ খাওয়া একই। এই কাজে জড়িয়ে ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুক্রবার রাজশাহীতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই কথা বলেন তিনি।

রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজামান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান।

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষ সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতামূলক এ সভার আয়োজন করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তদবির আর ঘুষ খাওয়া একই। যে কারণে কিছু কিছু তদবিরবাজদের আমি ধরেছি। জেলে ভরেছি। তদবিরবাজরা সাবধান!

প্রাইমারী স্কুলের বদলির ব্যাপারে তদবরি করবেন, আপনার সমস্যা। আমি এটা হুঁশিয়ারি দিতে চাই। আপনি হাওড়ে কেন যাবেন না, আপনি চাকরি করতে এসেছেন? আপনাকে হাওড়ে যেতে হবে।

তিনি যোগে করেন, ধরে ধরে জেলে পুরাটা দুদকের বড় কাজ না। দুদকের বড় কাজ হচ্ছে, দুর্নীতি যেন না হয় সেই কাজটা করা। আমি গত সাড়ে তিন বছরে দেখলাম, অনেক দুর্নীতিবাজ ধরে জেলে পুরা হলো।

কিন্তু লাভের লাভ তেমন কিছুই হলো না। শেষ পর্যন্ত আমরা কাছে মনে হয়েছে, যে আমরা দুটো জায়গায় মনে হয় কাজ করতে হবে। একটা হচ্ছে প্রাইমারি স্কুল, আরেকটা হাইস্কুল।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে মানসম্মত শিক্ষা পেলে একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না। একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না যদি সে প্রাইমারী স্কুলে সততার সাথে, শিক্ষকের কথা শুনে, মা-বাবার কথা শুনে পড়াশোনা করে। সে বড় হয়ে দুর্নীতিবাজ হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়ায় কি হয় আমরা জানি। সেই কারণে আমরাও বলেছি, সবকিছু কম্পিউটারাইজড করতে হবে।

কম্পিউটারই বলে দেবে, রহিম কোথায় যাবে, করিম কোথায় যাবে। ক্রাইটেরিয়া ফিস্কড করবেন, কম্পিউটার বলে দেবে কে কোথায় যাবে। বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে, কোনো তদবির চলবে না। তদবির এক ধরনের অপরাধ। তদবির একটা দুর্নীতি।

তিনি আরো বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ হতে হবে। আপনার এবার দেখেছেন পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমরা অনিয়ম বন্ধ করতে পেরেছি। আমি পুলিশকে সাধুবাদ দিয়েছি। ধন্যবাদ দিয়েছি যে, তারা একেবারে দুর্নীতিমুক্তভাবে, কারও কথা না শুনে পুলিশের নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষকও নিয়োগ হবে, কারও তদবিরে নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো দুর্নীতি সহ্য করা যাবে না। আমরা সহ্য করব না।

দুদকের কেউ হাত বেঁধে রাখেনি উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষকের পেনসন নিতে গিয়ে কী ভোগান্তি! সেটা আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। যারা অপরাধি তাদেরকে আমরা ধরেছি। আমরা ঘুষ হাতেনাতে ধরেছি।

আমাদের কেউ হাত বেঁধে দেয়নি। আমরা যে কোনো লোককেই ধরতে পারি। দুর্নীতি করলেই ধরা হবে। কোনো অনুমতি নিয়ে আমরা কাউকে ধরব না। আমরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছি। এসময় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে শিক্ষকদের তাগিদ দেন।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল-হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এএফএম মনজুর কাদির ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম।

সভায় রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনায় তারা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

বিএ-০৮/০১-১১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)