অসহায় রইস উদ্দীনের পাশে ‘আমরা মরাপাগলাবাসী’

প্রবাদে আছে ‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’। এর মানে কোনো কাজ যদি সবাই মিলে করা হয় তবে সেখানে হারলেও কোনো লজ্জা থাকে না। আফসোস থাকে না। আর জিতলে তো আনন্দের পরিমাণ সাধারণের থেকে বেড়ে যায়। সবাই মিলে কাজ করার মাঝে একটা আনন্দ আছে। আছে সুখানুভূতি। সবার সহযোগিতায় এরকম একটি কাজ করেছে ‘আমরা মরাপাগলাবাসী’ নামের ফেসবুক গ্রুপ।

গ্রুপটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের যোগাযোগের সাধারণ প্লাটফরম। ফেসবুকের এ গ্রুপটির উদ্যোগে এ ওয়ার্ডের এক অসহায় রইস উদ্দীন মিস্ত্রীর মাথার টিউমার অপারেশনের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর সফল অস্ত্রোপচার (অপারেশন) হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা চিকিৎসা ব্যয় হয়েছে এ অপারেশনে। এ উদ্যোগ সফল হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গ্রুপটির উপদেষ্টাবৃন্দ। পাশাপাশি তারা রোগীর পূর্ণ সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়েছেন।

পরবর্তী যেকোনো কাজে সকলকে এভাবে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গ্রুপটির সদস্যরা এ অপারেশনের চিকিৎসা ব্যয় বহনে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।

এতে শুরু থেকেই সার্বিক খোঁজ রেখেছেন বাসিরুল ইসলাম, বজলুর রশিদ, আশরাফ আলী, শামীম কবীর ও মোন্তাকিমুল রাজু। ছোট-বড় সকলেই এগিয়ে এসেছেন এ কাজে। গ্রামে থেকে, গ্রামের টানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে এতে সহযোগিতা করেছেন অনেকেই। দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে থেকেও গ্রাম, গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই।

চিকিৎসা ব্যয়ের বড় একটা অংশ এসেছে এ ওয়ার্ডের প্রবাসীদের থেকে। গ্রামের টানে দেশের বিভিন্ন জায়গার কর্মস্থল থেকে এতে সহযোগিতা করেছেন বড় মরাপাগলা থেকে বাসিরুল ইসলাম, বজলুর রশিদ, আশরাফ আলী, আব্দুল বারি মোন্না, তোসিকুল ইসলাম, আতাউর রহমান, মাহাবুর রহমানসহ অনেকেই। ছোট মরাপাগলা থেকে অংশগ্রহণ করেছেন মো. আনোয়ার হোসেন (সেলিম)। এছাড়া আরো অনেকে পরে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে থেকেও গ্রাম, গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন বড় মরাপাগলার মো. আব্দুল জাব্বার রুবেল, পিয়ারুল ইসলাম, মিনারুল ইসলাম, মো. সেমাজুল ইসলাম, মো. আব্দুল হাকিম, মো. আব্দুল মতিন। ছোট মরাপাগলার কোরিয়া প্রবাসী মো. আবু জার গিফারীও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন এ কাজে। এছাড়া আরো কয়েকজন এ উদ্যোগে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গ্রামে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন আবুল কাশেম খাকড়া, শহিদুল মড়ল, ওয়াসিম, এজাবুল, ফিরোজসহ অনেকেই। এছাড় গ্রামের যে যেভাবে পেরেছেন এগিয়ে এসেছেন।

এ উদ্যোগের বিষয়ে বুধবার মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জিল্লার রহমান বলেন, ‘এটা খুব আনন্দের বিষয় যে, আমরা এ কাজে সফল হয়েছি। এগুলো আসলে সামাজিক দায়বদ্ধতা। সমাজে বাস করতে গেলে এরকম কাজে অংশগ্রহণ করতে হয়।‘ পরবর্তী যেকোনো উদ্যোগে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। তিনি একাজে এগিয়ে আসার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি যেকোনো কাজে সমাজের সবাইকে পাশে থাকার ও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

একইভাবে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন ‘আমরা মরাপাগলাবাসী’র চিফ এডমিন আশরাফ আলী। তিনি বলেন, ‘প্রথম বার আমরা একটা বড় উদ্যোগে সফল হয়েছি। এটা আসলে সবার কাজ। সবার সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে।’ এভাবে যেকোনো কাজে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

‘আমরা মরাপাগলাবাসী’ নামের ফেসবুকের এ গ্রুপটির মাধ্যমে আট নম্বর ওয়ার্ডের যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা হয়। হয় সহজ যোগাযোগ। গ্রুপটিতে এই ওয়ার্ডের ভালো-মন্দ যেকোনো বিষয় উঠে আসে। যে যেভাবে পারে তথ্য দিয়ে ওয়ার্ডের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। মতামত, উন্নয়ন চিন্তা ভাগাভাগির এ গ্রুপটি খোলা হয় চার বছর আগে ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর। তারপর থেকে ওয়ার্ডের উন্নয়নে কাজ করার প্রচেষ্টারত গ্রুপ সদস্যরা। পরবর্তী যেকোনো উদ্যোগে সবসময় সকলকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এ গ্রুপের উপদেষ্টাবৃন্দ।

বিএ-১২/০৬-১১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)