দীর্ঘদিন হাসপাতালে আসেননি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

নানা পন্য কেনার নামে সরকারি অর্থ তোছরুপে অভিযুক্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এএসএম এমতেয়াজ গত প্রায় দুই মাস ধরে অফিস করছেন না। ফলে হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম থমকে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুদক এই কর্মকর্তার কার্যক্রমের বিষয়ে তদন্তে নামার পর থেকেই তিনি অফিসে আসছেন না। সর্বশেষ সোমবারও তিনি অফিস করেননি। রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে কর্মরত কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি ছুটিতে আছেন নাকি কোনো কাজে বাইরে আছেন। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ  হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর সূত্র মতে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছুটিতে নাই। কিন্তু তিনি কেন অফিস করেননি সেটি জানে না। তবে এরই মধ্যে গত সোমবার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বদলির একটি আদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে দপ্তরে এসে পৌঁছে। তাঁকে পূর্বাঞ্চলে বদলি করা হয় বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে রেলওয়ের দপ্তর থেকে।

সূত্র মতে, গত ২২ নভেম্বর শেষ অফিস করেন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এরপর থেকে তিনি আর অফিসে আসেননি। এমনকি নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতাও তুলতে আসনেনি তিনি রাজশাহীতে। তার বেতন-ভাতা কি হয়েছে সেটিও জানেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। তিনি বেতন-ভাতা তুলেছেন নাকি তাঁকে নিয়ে গিয়ে কেউ দিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কেও কেউ অকিবহাল নেই। এই অবস্থায় হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম পর্যায় থমকে রয়েছে। ২২ নভেম্বরের আগেও তিনি অনিয়মিত অফিস করতেন।

রেলওয়ে সূত্র মতে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় সর্বমোট ২৩১টি স্টেশন আছে। এর মধ্যে ৯২টি বন্ধ হয়ে গেছে। আর ৫৮টি ক্ষয়িষ্ণু। এসব স্টেশনে কর্মকর্তাই তেমন নাই। তবে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন এখনো রয়েছে প্রায় ৫০টির মতো। এই ৫০টির মধ্যে ১০টি স্টেশন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আওতায়। বাকি ৪০টি স্টেশন রয়েছে প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণাধিন ট্রাফিকের আওতায়।

এসব স্টেশন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার নামে বছরের পর বছর ধরে গত ২০১৭ সাল থেকে ২১০৯ সাল পর্যন্ত স্যানেটারির যাবতীয় মালামাল কেনার নামে অন্তত ১০ কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ ওঠে সম্প্রতি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে দুদক। এছাড়াও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করাসহ রয়েছে আরো বিভিন্ন অভিযোগ। এসব ফাইলপত্রও এরই মধ্যে জব্দ করেছে দুদক।

অন্যদেকি স্টেশনে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার নামে কোটি কোটি টাকা তোছরুপ করা হলেও রাজশাহী রেলস্টেশনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন অপরিস্কার থাকায় এখান স্যানেটারি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

তবে দুদকের পরবির্ত তদন্তের ভয়ে তিনি গত ২২ নভেম্বরের পর থেকে অফিস করেননি বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগেও তিনি নিয়মিত অফিস করতেন না। মাসে দুই-একদিন অফিসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যেতেন।

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এএসএম এমতেয়াজ বলেন, বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় মিটিং থাকায় রাজশাহীতে যেতে পারিনি। তবে গত ২ জানুয়ারি তিনি রাজশাহীতে ছিলেন। তবে নানা সমস্যা কাটিয়ে মঙ্গলবার পূর্বাঞ্চলে যোগদান করেছেন। তার দাবি কোনো অনিয়ম করেননি। অভিযোগগুলো সঠিক নয়।’

এদিকে দুদকের রাজশাহী সমন্বয় অফিসের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘রেলওয়ের বেশকিছু বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। বেশ কিছু নথিপত্র চাওয়া হয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, ‘তিনি ছুটিতে ছিলেন না। বিষয়টি তিসি শুনেছেন। এ নিয়ে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে তিনি বদলি হয়েছেন।’

এসএইচ-০৪/০৮/২০ (নিজস্ব প্রতিবেদক)