শ্রদ্ধার ফুলে ভরে গেছে রাজশাহীর শহীদ মিনার

শ্রদ্ধার ফুলে ভরে গেছে রাজশাহীর শহীদ মিনারগুলোর বেদি। ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে দিবসের প্রথম প্রতর থেকেই শহীদ মিনাগুলোতে ভীড় জমাতে থাকেন আপামর জনতা।

সকাল বেলায় প্রভাতফেরি নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ঠেকেছে আপামর জনতার স্রোত। নানা আনুষ্ঠানিকতায় বাহান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে রাজশাহীবাসী।

একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ১২টা ০১ মিনিটে রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মেয়র। এ সময় কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহা. হবিবুর রহমানসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এরপর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তর্বক অর্পন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেনী, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্নাসহ মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এখানে আলাদাভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।

কোর্ট শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) একেএম হাফিজ আক্তার ও রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহ।

মহানগরীর ভুবনমোহন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন। এসময় বিএফইউজের সহ-সভাপতি মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ সভাপতি, সহ-সভাপতি শরীফ সুমন, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি, সিনিয়র সদস্য রফিকুল ইসলাম, জিয়াউল গনি সেলিম, আজিজুল ইসলাম, তৈয়বুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এখানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অমর একুশের কর্মসূচির মধ্যে রাত ১২টা ১মিনিটে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ, সূর্যদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারি-বেসরকারি এবং আধা সরকারি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। সকালে ছিল রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার অভিমুখে প্রভাত ফেরি। মহানগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, সংস্থার সদস্য ও সর্বস্তরের জনগণ প্রভাত ফেরিতে অংশ নেন।

এছাড়া যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাব গাম্ভীর্যের সঙ্গে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে এবার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মহানগরীর হেতেম খাঁ মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বাদ যোহর কোরআন খানি ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধামত সময়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে।

মহানগরীর সড়ক দ্বীপসমূহে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বাংলা বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। সকাল থেকে রাজশাহী শিশু একাডেমিতে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চিত্রাঙ্কন, বাংলায় সুন্দর হাতের লেখা, ভাষার গান, দেশাত্ববোধক গান ও রচনা লিখন প্রতিযোগিতা চলছে।

শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেলে রয়েছে, ভাষা সৈনিকদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া সন্ধ্যায় গণযোগাযোগ অধিদফতরের উদ্যোগে মহানগরীর আলুপট্টি বঙ্গবন্ধু চত্বর, সাহেব বাজার ও লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানিয়েছেন, দিবসটি উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশ মোতায়নের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও টহল দিচ্ছে।

এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে কর্তব্য পালন করছেন। প্রথম প্রহর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনার, ভুবন মোহন শহীদ মিনার ও কোর্ট শহীদ মিনার এলাকা।

বিএ-০১/২১-০২ (নিজস্ব প্রতিবেদক)