করোনায় আক্রান্ত নন রাজশাহীর সেই নার্স

করোনায় নারীর
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউতে থাকা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেই নার্স করোনায় আক্রান্ত নন।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তিনি নিজেই ফোন করে সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্যটি জানিয়েছেন।

এজন্য তিনি সৃষ্টিকর্তার নিকট অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। দ্রুত সময়ে তার পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকদের কাছেও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

আজিজা সুলতানা নামের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স আরও বলেন, আপনারা যদি আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন না করতেন, আমার চিকিৎসা ও পরীক্ষা দ্রুত সময়ে হয়তো হতো না।

সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনের পর মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ তার করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেন। বুধবার রাতে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে তাকে জানানো হয়েছে তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। তার রিপোর্ট নেগেটিভ।

জানা গেছে, আজিজা সুলতানার বাড়ি নাটোর শহরের হরিশপুর মহল্লায়।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরুর পর তার শারীরিক পরিস্থিতি উন্নতি হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি নিজেই ফোন করে তার শারীরিক অবস্থার কথা সংবাদ মাধ্যমকে জানান।

তিনি আরও জানান, বুধবার সন্ধ্যার পরপরই আইইডিসিআর থেকে করোনা রেসকিউ টিমের সদস্যরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে তার করোনা পরীক্ষার জন্য রক্ত ও মুখের লালার নমুনা নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরপরই তাকে জানানো হয় তিনি করোনায় আক্রান্ত নন। এখন হাসপাতালের চিকিৎসকরা যেটা ভালো মনে করবেন তারা সেভাবেই পরামর্শ ও নির্দেশনা দেবেন।

ওই নার্স জানান, বুধবার রাত থেকে তার জ্বরের প্রকোপ অনেকটাই কমে আসে। সর্দি ও কাশি কমে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কিছুসময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল। ওষুধ দেয়ার সেটা কমে যায়। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার বিষয়ে খুবই আন্তরিক বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন হওয়ার পরপরই আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও নার্সেস অ্যাসোসিয়েশানের নেতৃবৃন্দ তার চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিয়েছেন ও নিচ্ছেন। এজন্য তিনি সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার মানবিক এইসব উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি তার সহকর্মীসহ সবার কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

গত ১৯ মার্চ ঢাকা থেকে বাসযোগে রাজশাহীতে ফেরার সময় ওই নার্সের সহযাত্রী ছিলেন একজন ইতালি প্রবাসী। পরদিনই তার সর্দি, কাশি ও জ্বর শুরু হয়। ওইদিনই তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় মেডিসিন ওয়ার্ডে।

করোনা সন্দেহে নার্সকে পাঠানো হয় রাজশাহীর বক্ষব্যাধি ও সংক্রমণ রোগ নিরাময় কেন্দ্র-আইইডিতে। সেখান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে গিয়ে জ্বরের তীব্রতা ও অন্যান্য উপসর্গ আরও বাড়লে ফের তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাকে আবারো আইইডির আইসোলেশনে নেওয়া হয়।

পরিস্থিতি অবনতি হলে মঙ্গলবার রাতে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

বুধবার আক্ষেপ করে এই নার্স সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, তার চিকিৎসায় অবহেলা হচ্ছে। করোনার উপসর্গ থাকলেও করোনার টেস্ট হচ্ছে না। নার্সের বক্তব্যটি যুগান্তর অনলাইনে প্রকাশের পরপরই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সঙ্গে তৎপর হয়ে উঠেন। বুধবার সন্ধ্যার পর করোনা টেস্টের জন্য তার রক্ত ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

বিএ-২৩/২৬-০৩ (নিজস্ব প্রতিবেদক)