‘বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল করলে ইসলামী শরিয়ায় পাপ হবে’: পৌর মেয়র

রাজশাহীর কাটাখালির পৌরসভার মেয়র আব্বাস একটি ঘোরায় বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাহাসড়কের কাটাখালি পৌরসভার অংশের উন্নয়নকাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এসময় তিনি বলেন,তখন মেয়র বলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু ডিজাইন চেঞ্জ করতে হচ্ছে। বড় হুজুরের সঙ্গে আমাদের এক লোক বসেছিলে, বসি যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামী শরীয়াহত মোতাবেক সঠিক না। এ জন্য আমি ওকে থুব না। সব করবো, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে মানুষ যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাছি যে, ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না, আমাক বুঝাই দিছে। এ জন্য আমি ওটাকে চেঞ্জ করছি।’

সোমবার রাত থেকে মেয়র আব্বাসের এমন অধর্তব্য দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে। এরই মধ্যে দাবি উঠেছে গাজিপুরের মেয়রের মতো কাটাখালি পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার।

১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপটিতে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই গেটটি দ্রুত নির্মাণ হবে। তবে আমরা যে ফার্মমে কাজটি দিয়েছি, তারা গেটের ওপরে বঙ্গববন্ধুর যে ম্যুরাল বসানোর ডিজাইন দিয়েছে, সেটি ইসলামীর দৃষ্টিতে সঠিক না। তাই আমি সেটিকে বাদ দিতে বলেছি।’

মেয়র বলেন, ‘যেভাবে বুঝেছে তাতে আমার মুনে হইছে যে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়্যা যাবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় তো আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না! বঙ্গবন্ধুক খুশি করতে যাইয়া নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি সিওর। তবে করলে কিছু করার নাই। মানুষেক সন্তুষ্ট করতে যাইয়া আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না তো।’ এর পর তিনি অস্রাব্য ভাসায় আরেকটি শব্দও উচ্চারণ করেন ‘

তবে মেয়র আব্বাস দাবি করেন তিনি এই ধরনের কোনো মন্তব্য করেননি। কেউ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আব্বাস আলী আরও বলেন, ‘হাইওয়েটাকে আমরা ডিজাইন করতে দিয়েছি। আমাদের যে অংশটা হাইওয়ে। সিটিগেট থেকে আমার অংশ। টোটালই একটা ফার্মকে দিয়েছি যে, তারা একদম বিদেশী স্টাইলে সাজায়ে দিবে ফুটপাত, সাইকেল লেন- টোটাল আমার অংশটা।’ কথার এই পর্যায়ে পাশে থেকে একজন যোগ করেন, ‘দুই পারে দুইটা গেট করার কথা আছে।’

দলীয় সূত্র মতে, আব্বাস আলী কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।

এদিকে মেয়র আব্বাসের এমন মন্তব্যে রাজশাহীর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ফেসবুকেও মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি করেছেন অনেকেই।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ময়র আব্বাস যদি এই ধরনের কথা বলেই থাকেন, তবে তিনি দলে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করবে এটা মেনে নেওয়া যাবে না।’

এসএইচ-০৯/২৩/২১ (নিজস্ব প্রতিবেদক)