আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন আর্থিক সহযোগিতা

পুরোটাই আধুনিক ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল ইভি। দেখতে বিদেশি রেসিং কারের মতো হলেও পুরোটাই দেশিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছেন ওয়ার্কশপে। গাড়িটির নাম ‘সিপি সি ২৩’ এটি তৈরি করা হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কশপে আন্তর্জাতিক একটি ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতার জন্য।

২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বানানো তিনটি ফর্মুলা স্টুডেন্ট ভেহিক্যাল দেশের বাইরে ভারত ও জাপানের কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আসে ঈর্ষণীয় সাফল্য। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর রুয়েট শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন ‘সিপি সি ২৩’ নামে ফর্মুলা স্টুডেন্ট ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল টু নামের আধুনিক একটি গাড়ি। যেটি নিয়ে আগামী আগস্ট মাসে পোল্যান্ডে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে প্রস্তুত তারা। টিম ক্র্যাক প্লাটুন নামে দলটির সদস্যরা মনে করছেন এমন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সফলতা পেলে দেশের অটোমোবাইল খাতকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে তারা। এখন শুধু প্রয়োজন দলটির পোল্যান্ড যাওয়া আসার যাতায়াত খরচ এবং অংশ নেয়া গাড়িটির শিপিং ব্যবস্থাপনা। সহায়তার জন্য দেশিয় প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, সারা দেশের মধ্যে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই একমাত্র আন্তর্জাতিক ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতায় অনসাইড ইভেন্টে তাদের তৈরি গাড়ি নিয়ে অংশ নেয়। ২০২৩ সালে সুইজারল্যান্ডে আয়োজিত এমন একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সময় মতো গাড়ি শিপিং না হওয়ায় যেতে পারেন নি তারা। তবে অনলাইন স্ট্যাটিক ইভেন্টে বিজনেস প্ল্যাটফর্ম প্রেজেন্টেশনে চতুর্থ হন তারা। যেটি তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে।

দলটির দলনেতা শেখ তকী তাহমিদ জানান, ইতোমধ্যে টিম ক্র্যাক প্লাটুনের ৫৮ জনের বছর খানেকের চেষ্টায় গাড়িটির প্রাথমিক নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আস্ত এই গাড়িটি নিজ হাতে ওয়ার্কশপে তৈরি করেছেন রুয়েটের মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন, ম্যাটারিয়াল সায়েন্স, গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস এবং ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গাড়ি তৈরির জন্য চারটি দলে এই ৫৮ জন কাজ করছেন। দলগুলো হলো বিজনেস টিম, ডিজাইন টিম, ইলেকট্রিক্যাল টিম, মেকানিক্যাল টিম। নির্মাণের জন্য গাড়িটির বেশ কিছু যন্ত্রাংশ আনা হয়েছে ভারত, জার্মানিসহ বেশ কিছু দেশ থেকে। নামকরা গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা তাদের এই গাড়ির ডিজাইন রিভিউসহ ব্যাটারির সাপোর্ট দিয়েছে। প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক রুল বুক অনুযায়ী গাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে, এখন শুধু প্রতিযোগিতায় নামার পালা।

এমন গাড়ি নির্মাণ ও প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মূল উদ্দেশ্য হিসেবে দলটির শিক্ষার্থী জিএম সাদ বলছেন, দেশের অটোমোবাইল খাতে দেশিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প খরচে গাড়ি নির্মাণে সহায়তা করা। যদি কোনো দেশিয় গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়, তারা সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া মাত্র ১৭ লাখ টাকায় তারা এ গাড়িটি নির্মাণ করেছেন। স্বল্প দামে কিভাবে দেশিয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক গাড়ি তৈরি করা যায় সেটিই এ প্রতিযোগিতায় নামার মূল উদ্দেশ্য।

এ প্রজেক্টের তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষক রুয়েটের মেকানিক্যাল অনুষদের ডীন অধ্যাপক রোকনুজ্জামান জানান, ২৭ থেকে ৩০ আগস্ট পোল্যান্ডে আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ২২ জনের এ দলের যাতায়াত এয়ার টিকিট ও গাড়ি শিপিং বাবদ যে খরচ তা সহায়তা প্রয়োজন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এ খাতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাহলে তাদের অংশ নেয়া সহজ হবে। যেখানে খরচ প্রয়োজন অন্তত ২৭ লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থী পর্যায়ে এমন গবেষণা ও নতুন উদ্ভাবন দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এমন গবেষণা ও উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। যে শিক্ষার্থীরা পূর্বে এমন গবেষণা প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা এখন বড় বড় অটোমোবাইল কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

আগামী আগস্ট মাসের শেষে পোল্যান্ডে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ফর্মুলা স্টুডেন্ট প্রতিযোগিতায় অনসাইড ইভেন্টে অংশ নিতে ২২ জনের একটি দল ‘সিপি সি ২৩’ নামের গাড়িটি নিয়ে অংশ নিতে প্রস্তুত হয়েছেন। এ প্রতিযোগিতায় ৬টি দেশ থেকে মোট ১৩টি দল অংশ নিচ্ছে। যাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতিযোগিতায় দলটি স্ট্যাটিক, টেকনিক্যাল ইনসপেকশন এবং ডায়নামিক পর্বের এক হাজার পয়েন্টের স্কোরের সর্বোচ্চ নম্বর লাভ করতে পারলেই স্কলারশিপসহ প্রাইজ মানি পুরস্কার পাবে। সেই সঙ্গে দেশের নাম উজ্জ্বল হবে।

এসএইচ-০৬/১৮/২৩ (নিজস্ব প্রতিবেদক)