নাজাতের বারতা নিয়ে এসেছে পবিত্র মাহে রমযান

কালের পরিক্রমার পথ ধরে মুসলিম উম্মাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতা নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র মাহে রমযান। পবিত্র মাহে রমযানের প্রথম দিন। আল্লাহর বিশেষ করুণা ও দয়া লাভের অপার সুযোগের মাস মাহে রমযান। দীর্ঘ এগারটি মাসের পাপপঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে পবিত্র রমযান।

পবিত্র রমযানের আগমনে মুসলিম সমাজ ও ইসলামী জীবন ধারায় এক বিরাট পরিবর্তনের সৃষ্টি হয়। খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ,পাপ মোচন আর সৎ কাজ করার সুযোগ এনে দিয়েছে পবিত্র রমযান। পাপী তাপী সকল মানুষের জন্য এক অনাবিল শান্তি ও চিরস্থায়ী মুক্তির পয়গাম নিয়ে মাহে রমযান প্রতি বছরই আমাদের সামনে হাজির হয়। প্রতি বছরই এর আহ্বান থাকে চিরন্তন। এ মাসে ইবাদাত বন্দেগীর তাৎপর্য অনেক। এর কল্যাণময় আবেদনের কোন শেষ নেই। রোযা ইসলামের মৌলিক ইবাদাতের মধ্যে অন্যতম। আর এ রোযা পবিত্র রমযান মাসেই আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। এ আয়াত প্রমাণ করে রোযা আমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয ছিল। রমযান আরবী শব্দ। অর্থ দহন। ইসলামী বিশ্বকোষে রমযান অর্থ গ্রীষ্মের উত্তাপ উল্লেখ করা হয়েছে। আরবী বছরের নবম মাস হিসেবেই এর পরিচয় রয়েছে। রমযান মাসেই পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে মানুষের জন্য, মানুষের হেদায়েতের জন্য।

আল্লাহ পাক রমযান মাসের রোযা ফরয করেছেন এবং এর রাতগুলোতে আল্লাহর সামনে দ-ায়মান হওয়াকে আহাম ইবাদত রূপে সুনির্দিষ্ট করেছেন। হাদীস শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ রাতে আল্লাহর রেজামন্দি, সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশে কোন ওয়াজিব, সুন্নাত বা নফল আদায় করবে, তাকে এর জন্য অন্যান্য সময়ের ফরয ইবাদততুল্য সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন ফরয আদায় করবে, সে অন্যান্য সময়ের সত্তরটি ফরয ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ করবে। এ মাস ধৈযর্, তিতিক্ষা ও সবরের।

ধৈর্যের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহর নিকট থেকে জান্নাত লাভ করা যাবে। এটা পরস্পর সৌজন্য ও সহৃদয়তা প্রদর্শনের মাস। এ মাসে মুমিন বান্দাদের রিযিক প্রশস্ত করে দেয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে এর বিনিময়ে তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং জাহান্নাম হতে তাকে মুক্তি ও নিষ্কৃতি দেয়া হবে। আর তাকে আসল রোযাদারের সমান সওয়াব দেয়া হবে। তবে সেজন্য আসল রোযাদারের সওয়াব বিন্দুমাত্র কম করা হবে না।

বর্ণনাকারী বলেন, আমরা আরয করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমাদের মাঝে সকলেই রোযাদারকে ইফতার করাবার সামর্থ্য রাখে না এমতাবস্থায় তারা কিভাবে এই পুণ্য লাভ করবে? তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি রোযাদারকে একটা খেজুর, দুধ বা এক ঢোক সাদা পানি দ্বারাও ইফতার করাবে, তাকেও আল্লাহ পাক এই সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি একজন রোযাদারকে পূর্ণমাত্রায় পরিতৃপ্ত করবে আল্লাহ পাক তাকে হাউজে কাউসার হতে এমন পানীয় পান করাবেন যার ফলে জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না।

এটা এমন এক মাস যে, এর প্রথম দশ দিন রহমতের ঝর্ণা ধারায় পরিপূর্ণ। দ্বিতীয় দশ দিন ক্ষমা ও মার্জনার জন্য সুনির্দিষ্ট এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভের উপায়রূপে নির্ধারিত। আর যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের অধীনস্থ লোকদের শ্রম ও মেহনত হ্রাস বা হালকা করে দেবে, আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা প্রদর্শন করবেন এবং তাকে জাহান্নাম হতে নিষ্কৃতি ও মুক্তিদান করবেন। আল্লাহ পাক এর মহান বাণী পবিত্র আল কুরআনসহ আসমানী কিতাবসমূহ এই মাসে নাজিল হয়েছে। এই মাসেই রয়েছে পবিত্র লাইলাতুল কদর। যার মূল্য হাজার মাস ইবাদতের ঊর্ধ্বে। এই মাসের প্রথম দশ দিন রহমতের বারিধারায় অবগাহন, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাত ও ক্ষমার আলোকে উদ্ভাসিত, আর শেষ দশ দিন জাহান্নাম হতে মুক্তি ও নিষ্কৃতির সুবর্ণ সুযোগ। এই সুযোগ লাভ করে ধন্য হওয়ার কামনা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের অন্তরে থাকা প্রয়োজন।

পবিত্র রমযানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বানী দেয়া হয়েছে। বাণীতে রমযানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে দেশে শান্তি ও কল্যাণময় সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্বআরোপ করা হয়েছে।

এসএইচ-০১/০৭/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)