শেষ হয়ে গেল রহমতের সময়
পবিত্র রমযানের প্রথম অংশের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে আজ। আজকের ইফতারের মাধ্যমে রহমতের দশ দিন শেষ হয়ে যাবে। শুক্রবার থেকে শুরু হবে মাগফিরাতের অংশ। রহমতের দশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল ঠিকই। কিন্তু আমরা আল্লাহর কাছ থেকে কতটুকু রহমত পেয়েছি। তার হিসাব নিকাশ করে মাগফিরাতের দশমদিনে আল্লাহর কাছ থেকে জীবনের সকল পাপ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
আল্লাহ তাআলা রোজার আদেশ দেবার পর বলেছেন ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’ অর্থাৎ সম্ভবত তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করবে। রোজা হতে সে সুফল লাভ করা যায় তা রোজার উদ্দেশ্য অর্জনের ওপর নির্ভরশীল। শুধু পানাহার, কামাচার থেকে বিরত থাকলেই উদ্দেশ্য সফল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : ইন্নামাল আ’মালু বিন্নিয়্যাত অর্থাৎ সকল কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।
তাই যে ব্যক্তি রোজার উদ্দেশ্য জেনে নেবে, ভাল করে বুঝে নেবে আর তা দ্বারা মূল্য উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করবে সে তো সফলকাম হবে। কিন্তু যে এটার উদ্দেশ্য জানবে না এবং তা হাসিলের চেষ্টা করবে না, রোজা দ্বারা তার কোনো উপকার হবার আশা করা যায় না। তাই রোজার মূল উদ্দেশ্যকে ভালভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং তা হাসিলের যথার্থ চেষ্টা করতে হবে।
আল কুরআনে বর্ণিত ‘তাত্তাকুন’ শব্দটি ‘ওয়াকয়ুন’ মূলধাতু থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ বেঁচে থাকা। এর আরেকটি অর্থ ভয় করা। যেমন আয়াতে এসেছে ‘ওয়াত্তাকুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করো। ‘ওয়াত্তাকুন্নার’ জাহান্নামের আগুনকে ভয় করো। তাকওয়া হলো গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা। যেহেতু এগুলো প্রত্যেকটি ভয়ের বিষয়। যদি রোজা রাখার পরও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে না পারে তাহলে সে রোজা হবে অন্তঃসারশূন্য রোজা।
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত রসূল (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি অহেতুক ও মিথ্যা কথা, কাজ থেকে বিরত থাকতে পারলো না তার পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। তাই রোজা রেখে তাকওয়ার মহান গুণাবলী অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। নিজের চক্ষু, কর্ণ, জবান, পেট ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হারাম খাওয়া, হারাম দেখা, হারাম শোনা এবং হারাম বলা ইত্যাদি থেকে নিজেকে হিফাজত করতে হবে। মূলত শুধু গুনাহের কার্যাবলী থেকে বেঁচে থাকার নাম তাওকয়া নয় বরং গুনাহের যাবতীয় কাজ বর্জন করে নেক আমলসমূহ কার্যকর করাই হল বাস্তবে তাকওয়া।
মহান রাব্বুল আলামিন তার পবিত্রগ্রন্থ আল-কুরআনে এরশাদ করেছেন- ‘ও মানুষেরা তোমরা যারা ঈমান এনেছ, রোজা অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির লোকদের ওপর; যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার বা মোত্তাকি হতে পার’।
‘আস-সউম’ শব্দের অর্থ হলো- রোজা বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকা। এটা হলো সাধারণ অর্থ। বাহ্যিক অর্থ এবং এই বাহ্যিক শব্দের মধ্যে তাকওয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না, শুধু রোজা রাখা হবে, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকা হবে। কিন্তু এই শব্দের আরেকটি অর্থ আছে, যাকে বলে অভ্যন্তরীণ বা ভেতরের অর্থ অথবা বলা যায় কুরআনিক অর্থ। যার মানে হলো- আল্লাহর জন্য রমজানের ফরজ রোজার নিয়তে সেহরি খাবেন। তারপর, ফজরের আজান থেকে নিয়ে মাগরিবের আজান পর্যন্ত কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণ না করা, স্ত্রীর কাছে না যাওয়া, খারাপ কথা না বলার নাম হলো রোজা।
সেই তাকওয়া অর্জন করার জন্য রোজা রাখার নিয়ম আল্লাহর রাসূল সা: এভাবে বলেছেন, যে রোজা আমাদের তাকওয়া দিবে, সংশোধন করবে, পরহেজগার বানাবে ও সম্মানের সাথে পৃথক দরজা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে; সেই ধরনের রোজা রাখতে হলে প্রথমে আমাদের রোজা রাখার নিয়তে সেহরির সময়ে সেহরি খেতে হবে। আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন- ‘তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে’ (বুখারী-মুসলিম)। সেহরি না খেলে আপনার রোজা হয়ে যাবে কিন্তু সেহরির সওয়াব থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। সুতরাং, সেহরির সময় সেহরি খেয়ে আপনি নিয়ত করেন।
বাজে ও মিথ্যা কথা, ধোঁকাবাজী এবং এই ধরনের যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমাদের চোখ, হাত পাসহ আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিন্তু রোজা রেখেছে, সেটা আমাদের মাথায় থাকতে হবে। তাই আমাদেরকে অফিস আদালতে এমন কোনো কাজ করতে পারবো না, যা হালাল নয় বা যা অন্যের ক্ষতি করে। ইসলামি শরিয়তে রোজা রাখা মানে সমস্ত শরীরের রোজা রাখা।
রাসূল সা: বলেছেন- ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো দিন রোজা রাখে, তখন রোজা অবস্থায় সে যেন কখনো খারাপ ভাষা, চিৎকার, গালিগালাজ, অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়ে না পড়ে। কেউ যদি তার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায় বা তর্কে লিপ্ত করতে চায় তাহলে সে যেন বলে, ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি রোজা রেখেছি। (বুখারী -মুসলিম)
রোজার উদ্দেশ্য হলো- তাকওয়া অর্জন। যেটার জন্য আল্লাহ রোজাকে ফরজ করেছেন। তাই রমজান মাসের সব আমল- সেহরি, ইফতার, তারাবিহ, খতমে কুরআন, তাহাজ্জুদ, সদাকাতুল ফিতর ও ঈদের আনন্দ এ সব ইবাদাতের আগে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, এগুলো করার পেছনে উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা।
সুতরাং, রোজা অবস্থায় আমাদের কোনো অহেতুক কথা বা ঝগড়ায় জড়ানো মোটেই ঠিক নয়। এভাবে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারব ইন’শা আল্লাহ।
এসএইচ-০৪/১৬/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)