মাগফিরাতের দিন শেষ হওয়ার পথে

আজ ১৫ রমযান। মাগফিরাতের দিনগুলোও শেষ হওয়ার পথে। রমযান মাসে দান খয়রাতেরও অনেকগুন সওয়াবের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ জন্য অনেকেই রমযান মাসে যাকাত আদায় করে থাকে অনেক সওয়াব পাবার আশায়। আর এ মাসে গরীবদের জন্য ধনীদের উপর সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব করা হয়েছে। ইসলামে ধনী-গরীব সকলে সমান। দুই ঈদের সময় শুধু ধনীরা আনন্দ-ফুর্তি উপভোগ করবে তা ইসলাম কখনোই সমর্থন করেনি। ধনীদের পাশাপাশি গরীবরাও যেন আনন্দ করতে পারে সে জন্য ইসলামী শরীয়তে ঈদুল ফিতরে ধনীদের উপর সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা পরিশোধ করা ওয়াজিব করেছে।

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসলমানদের প্রত্যেক গোলাম, স্বাধীন ব্যক্তি, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার উপরে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাদাকাতুল ফিতরের এ দান ধনীদেরকে ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই বণ্টন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেন গরীব মিসকিনরা এ সাদকা দ্বারা ঈদবস্ত্র ও মিষ্টি খাদ্য ক্রয় করে ঈদের খুশিতে অংশীদার হতে পারে। এবারের মাথাপিছু সর্বনি¤œ ফেতরা ৭০ টাকা।

সাদাকাহ অর্থ দান করা, প্রদান করা। আর ফিতরা অর্থ ভঙ্গ করা। দীর্ঘ একমাস রোযাব্রত পালন করার পর ঈদের দিন সকালে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ত্রিশ দিনের গড়ে উঠা ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসার যে প্রয়াস তাই ফিতরা, আর এ রোযাব্রত পালন করতে যে ছোটখাট অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক।

এ ত্রুটি বিচ্যুতিকে যেন রোযার শেষের প্রথম দিনেই ঝেড়ে মুছে ফেলা যায় তার জন্য যে দান নির্ধারিত করা হয়েছে তাই সাদাকাতুল ফিতর। এ দানের মাধ্যমে দীর্ঘ রোযাব্রত পালনে কোন ঘাটতি থাকলে তাকে পরিশুদ্ধ করে সকল রোযা আল্লাহ পরিপূর্ণ করে দিবেন। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, রোযার মাসের শেষ দিকে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা অবশ্য কর্তব্য।

সাদাকাতুল ফিতর কার উপর ওয়াজিব এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত পরিলক্ষিত হয়। ইমাম শাফেয়ী, আহমদ ও মালেক (রহঃ)-এর মতে, যে ব্যক্তি নিজ ও নিজ পরিবারের লোকজনের জন্য এক দিনের অন্ন-বস্ত্রের খরচাদি ছাড়াও সাদাকাতুল ফিতরের সমূল্য সম্পদের মালিক তার উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। এ জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা শর্ত নয়। তাদের যুক্তি হলো- সাদাকাতুল ফিতর সংক্রান্ত যতো হাদীস এসেছে তা সবই আম বা ব্যাপক। এসব হাদীসে নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হতে হবে এমন শর্ত উল্লেখ নেই। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর মতে, যে ব্যক্তি ঈদের দিন পারিবারিক খরচাদি ছাড়াও নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তার উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব।

তাদের দলিল হলো, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীস, লা সাদাকাতা ইল্লা আন জাহরে গানিয়্যীন” অর্থাৎ গনী বা ধনী ছাড়া অন্যের উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব নয়। “আফদালুল সাদাকাতে আন জাহরে গানিয়্যীন” অর্থাৎ ধনীদের পক্ষ থেকে দান করা সাদাকাতুল ফিতরই উত্তম দান। তাদের মতে- গনী বা ধনী বলা হয় যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন, সুতরাং সাদাকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে মালে নাসী ও হাওলানুল হাওল বা এক বছর নেসাব পরিমাণ মাল অব্যাহতভাবে থাকা শর্ত নয়। বরং যে পরিমাণ মালের উপর যাকাত ওয়াজিব হয় ঈদের দিন সকালে সে পরিমাণ মাল থাকলেই সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে।

ইমাম আবু হানিফা ও সাহেবাইনের মতে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। তাদের যুক্তি হলো- আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আন্না সাদাকাতুল ফিতরে হাক্কুন ওয়াজিবুন আলা কুল্লি মুসলিমিন মিন জাকারিন আউ উনছা” অর্থাৎ সাদাকাতুল ফিতর হলো গরীবের হক এবং তা আদায়কারী নারী ও পুরুষ সকলের উপর ওয়াজিব।

আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাকে অপ্রয়োজনীয় ও অশ্লীল কথাবার্তা ও কার্যকলাপ থেকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য এবং মিসকীনদের কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজা, বায়হাকী)

অন্য হাদীসে রয়েছে : ‘তাদের আজকের দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরা থেকে অমুখাপেক্ষী রাখ’ (বায়হাকী, দারু কুতনী)
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, মহিলা, ছোট-বড় সকল মুসলমানের ওপর এক ছা খেজুর বা এক ছা যব যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং তা লোকেরা ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম)

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যাকাতুল ফিতর বের করে দিতাম এক ছা খাদ্য আথবা এক ছা যব আথবা এক ছা খেজুর আথবা ছা কিসমিস। (বুখারী)

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ঈদুল ফিতরের দিনে এক ছা খাদ্য বের করে দিতাম। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিসমিস, পনির এবং খেজুর। (বুখারী)
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে এক ছা খাদ্য অথবা এক ছা খেজুর অথবা এক ছা যব অথবা এক ছা কিসমিস সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করতাম।

যখন মু’আবিয়া (রা.) মদীনায় আসলেন এবং গমের মওসুম আসল, তিনি বললেন, আমি মনে করি এটার এক মুদ উপরোক্ত মুদের দুই মুদের সমান হবে। (বুখারী)

এসএইচ-০১/২১/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)