ধনীদের উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব

পবিত্র রমযানের শেষের দিকে গরীবদের ঈদ উদযাপন করার জন্য ধনীদের উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে। একটি নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য বা খাদ্যের সমপরিমাণ অর্থ গরীবদেরকে দান করতে হয় সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে। সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ হিসেবে হাদীসে এক সা বা অর্ধ সা পরিমাণ খেজুর, আঙ্গুর, যব, কিসমিস, গম ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে প্রত্যেক দেশের আলেম ওলামাগণ রমযানের মাঝামাঝিতেই জনপ্রতি সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ কত হবে তা বলে দেন। উক্ত হাদীসের আলোকে ১ কেজি ৬শ ৫০ গ্রাম আটার স্থানীয় মূল্য অনুযায়ী দেশের আলেমগন সাধারণত সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করে থাকেন। সে অনুযায়ী এবারের ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার মাথাপিছু সর্বনিন্ম ফিতরা ৭০ টাকা। কেউ ইচ্ছা করলে নির্ধারিত ফিতরার চেয়ে বেশী তথা ১ কেজি ৬শ ৫০ গ্রাম খেজুর বা কিসমিসের দাম ধরেও ফিতরা আদায় করতে পারবে।

সাদাকাতুল ফিতরের মাল বা অর্থ তাদেরকে দেওয়া যাবে যারা যাকাতের অর্থ পাওয়ার হকদার। মহাগ্রন্থ আলকুরআনের সূরা আততাওবার ষাট নাম্বার আয়াতের আলোকে এসব লোক হলো- ফকির অর্থাৎ যার সামান্য সম্পদ আছে (মান লাহু শাইয়ুন) কিন্তু এর মাধ্যমে যে তার সারা বছরের খাদ্যের সংকুলান দিতে পারে না তাকে ফকীর বলা হয়। এই সম্পদ যদি নেসাবের পরিমাণের চেয়ে কম হয় তবে তাকে সাদাকাতুল ফিতর দেয়া যাবে। মিসকিন অর্থাৎ যার কিছুই নেই (মান লাইছা লাহু শাইয়ুন), একেবারে নিঃস্ব তাকে মিসকিন বলা হয়। এদেরকে সাদাকাতুল ফিতরের টাকা দেওয়া যাবে।

মুসাফির (ইবনুস সাবীল)। যাকাত আদায়কারী কর্মচারী। ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি, ঋণ পরিশোধের কোন উপায় নেই, ঋণের বোঝায় ভারাক্রান্ত ব্যক্তি। আল্লাহর পথে (ফি সাবীলিল্লাহ) দ্বীন কায়েমের পথে। যে সব দাসদাসী মুক্তির ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ এবং ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমকে। তবে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরার টাকার পরিমাণ যেহেতু অল্প তাই নিজ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা গরীব রয়েছে তাদের মধ্যে বণ্টন করাই বেশী কল্যাণের কাজ হবে। অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে ঈদের দিন সকালের মধ্যে ঈদের নামাজের পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করে দিতে। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

গোলাম ও শিশুদের উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব, অথচ গোলাম তো কোন কিছুরই মালিক নয়। আর শিশু তো শরীয়ত পালনে আদিষ্ট নয়, সুতরাং তারা কিভাবে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, গোলামের সাদাকাতুল ফিতর মনিবের পক্ষ থেকে আর শিশুর সাদাকাতুল ফিতরা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আদায় করবে। কারণ অভিভাবক কিংবা মালিক তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করে।

যেমন দেখা যায়, তারা কোন অন্যায় বা কারো কোন কিছু নষ্ট করলে তাদের অভিভাবক ও মালিককে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। অনুরূপভাবে হাদীসে ক্রীতদাস ও শিশু উল্লেখের দ্বারা তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে। যে শিশু ঈদের দিনের সুবহে সাদিকের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছে তার পক্ষ থেকে অভিভাবকদের উপর সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। আর ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে তার উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে না।

সাদাকাতুল ফিতর কখন আদায় করতে হবে? সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে ঈদের সালাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। এর পরে আদায় করলে সাদাকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। কেননা সাদাকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে, মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরা থেকে কমপক্ষে সেদিনের জন্য রেহাই পেতে পারে। ঈদের অনেক আগে দেয়া হলে হয়তো তা ঈদের আগেই ফুরিয়ে যাবে, ফলে ঈদের আনন্দে শামিল হওয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনিভাবে ঈদের পরে আদায় করলেও সাদাকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

কেননা তাতে ঈদের আনন্দে শামিল হওয়া সম্ভব হবে না। এ দুই প্রকারের দানই সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে, সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের পূর্বে আদায় করবে, তা হবে গ্রহণ যোগ্য যাকাত, আর যে ব্যক্তি সালাতের পরে আদায় করবে তা হবে অন্যান্য দানের মতো সাধারণ দান। (ইবন মাজাহ) উল্লেখ্য, এখানে সালাত বলতে ঈদের সালাত এবং যাকাত বলতে সাদাকাতুল ফিতর বোঝানো হয়েছে এবং তা (সাদাকাতুল ফিতর) লোকেরা ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী, মুসলিম) অতএব সাদাকাতুল ফিতর ঈদের পূর্বেই আদায় করতে হবে, ঈদের পরে নয়।

তবে কেহ যদি এমন জায়গায় বসবাস করে যেখানে দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না; যেমন সমুদ্রে অবস্থান করছে বা এমন ধনী এলাকা যে, আশপাশে কোথাও দরিদ্র মানুষের বসবাস নেই। এ অবস্থায় যখনই সুযোগ আসবে, তখনই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করবে, এতে বিলম্বের জন্য তার কোনো গোনাহ হবে না।

সাদাকাতুল ফিতর পাওয়ার উপযুক্ত তারাই, যারা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত। তবে সমাজের দরিদ্র-অনাথ এবং নিজের গরীব আত্মীয় ও প্রতিবেশীকে দেয়াটাই অধিক উত্তম। কেননা হাদীসে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, দরিদ্রের খাবারের ব্যবস্থা করা। অতএব সাদাকাতুল ফিতর একমাত্র দরিদ্র-অনাথকে দিয়ে ঈদের আনন্দে তাদের শামিল করবে এবং নিজের রোজাকে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পরিচ্ছন্ন করবে- এটাই হবে সাদাকাতুল ফিতরের লক্ষ্য।

এসএইচ-০১/২২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)