যারা শর্ত দুটি পালন করবে তাদের গুনাহ মাফ হবে

যে বিশেষ দোয়া

মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিলের মাস পবিত্র রমযান উপলক্ষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মোমিন বান্দাদের গুনাহ মাফ করে থাকেন। তবে এ জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তাকে অবশ্যই ঈমান ও ইহতেসাবের সহিত রোজা পালন করতে হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীস শরিফে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতেসাব সহকারে রোজা রাখেন তার পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এখানে দুটি শর্ত দেয়া হয়েছে। যারা শর্ত দুটি পালন করবে তাদের গুনাহ আল্লাহ মাফ করবেন। শর্ত দুটি হলো, ঈমান থাকতে হবে এবং ইহতেসাব বা মনে মনে হিসাব করে দেখতে হবে যে মূল শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আল্লাহ রোযা ফরয করেছেন সে শিক্ষা আমি গ্রহণ করেছি কি না।

পবিত্র রমযানের রহমত ও মাগফিরাতের দশক অতিক্রম করে এখন নাজাতের দশক চলছে। আমাদের উচিত এখনো আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে জীবনের গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়া। কেননা রমযানের সুবর্ণ সুযোগ লাভ করেও জীবনের জানা অজানা অপরাধ সমূহ ক্ষমা করিয়ে না নিতে পারলে জীবনে অনেক দুর্ভোগ রয়েছে। এমন কী রাসূল(সাঃ) এমন ব্যক্তি ধ্বংস হওয়ার পক্ষে আমিন বলেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , ‘মাহে রমযানে সিয়াম সাধনার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করা স্বত্ত্বেও যে ব্যক্তি নিজেকে জাহান্নামের আগুন বিমুক্ত হতে সক্ষম হল না সে প্রকৃতপক্ষেই দুর্ভাগা।’ এ দুর্ভাগ্যের বোঝা মাথায় নিয়ে যারা নিজেদের জীবনকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিতে চায় তাদেরকে আজ এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার যে, সকলেরই মহান আল্লাহ পাকের নিকটে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এ সীমাহীন যাত্রাপথের সম্বল সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জন করে নেয়াই শ্রেয়। জ্ঞান ও বিবেক সম্পন্ন মানুষ ন্যায় কল্যাণ এবং মঙ্গলময় জীবন যাপনেই আনন্দ পায়, শান্তি পায়। এ শান্তিই হোক সকলের কামনার ধন।

এ মাসে ক্ষমা লাভের জন্য ইবাদত, রিয়াযত ও তওবা ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হবে। বস্তুত, বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার সুসংবাদ প্রাপ্তির চেয়ে আর কোন বড় পাওনা নেই। এজন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) তাঁর প্রিয়তম স্ত্রীকে দুআ মুনাজাত শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছেন, আয়েশা, তুমি আল্লাহর কাছে বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারীম তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী- ‘হে আল্লাহ! তুমি তো বড় ক্ষমাশীল, দয়াবান। ক্ষমা করাকে পছন্দ কর।

আমাকে ক্ষমা কর।’ বস্তুত, আখিরাতের হিসাব-নিকাশ এত জটিল ও ইনসাফপূর্ণ যে, আল্লাহ যদি কাউকে পাকড়াও করতে চান তাহলে নিস্তার নেই। এ ক্ষেত্রে যদি তাঁর দয়ায় ক্ষমার মওকা মিলে তাহলেই কেবল তাঁর নাযাত সম্ভব। আমাদের জাতীয় কবি নজরুল এজন্য অত্যন্ত ব্যাকুল করা ফরিয়াদ করেছেন-রোজ হাশরে আল্লাহ আমার করোনা বিচার/ বিচার চাহিনা চাহি খোদা করুণা তোমার….।’

এ সময় ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য আমাদের চিন্তা, চেতনা ও আমলের মধ্যে শুদ্ধতা আনতে হবে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (র.) হতে বর্ণিত আছে, হুজুরে করীম (স.) বলেছেন, এমন কোন বান্দা নেই যে বেহুদা কথাবার্তা ত্যাগ করে আল্লাহ তায়ালার জিকির চর্চার সাথে সাথে তাঁর হালালকে হালাল জেনে এবং হারামকে হারাম মনে করে রোজা রাখবে এবং সমস্ত রমযানের মধ্যে কোন খারাপ কাজ করবে না। (তবে অবশ্যই) রোজার মাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার সমুদয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। তার প্রত্যেক তাসবীহ ও তাহলিলের বিনিময়ে বেহেস্তের মধ্যে একখানা প্রাসাদ তার জন্য তৈরি করা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (স.) এর সুসংবাদ কার্যকর হওয়ার জন্য ও আখিরাতের পাথেয় লাভের জন্য আমাদের খুলুসিয়াতের সাথে যথাযথভাবে সিয়াম সাধনায় কোশেশ করতে হবে। আমরা কখনো শয়তানী কুমন্ত্রণায় সাড়া দেব না, লোভে পড়ে হারামের পথে অগ্রসর হবো না। হালাল রাহে দীনহীনভাবে হলেও চলার প্রত্যয়ী হবো। হারাম উপার্জন সমুদয় ইবাদত কবুলের পথের বড় অন্তরায়। বস্তুত, হালাল পথে চলার জন্য নিজের ইচ্ছেশক্তিই যথেষ্ট।

মহনবী (স.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে ‘কানা লাহু মাগফিরাহ’… তা তার জন্য ক্ষমা এবং দোজখ থেকে মুক্তির এক বিরাট ওয়াসিলা হয়ে থাকে। হযরত রাসুলে কারীম (স.) বলেছেন : ৪টি কাজ রমজান মাসে বেশি বেশি করবে। দু’টি কাজ আল্লাহর জন্য আর দুটি কাজ যা না করলে তোমার উপায় নেই। তন্মধ্যে প্রথম দুটি হলো কালিমা- ত্ইায়্যেবা ও ইস্তেগফার আর অপর দুটি হলো বেহেস্তের প্রত্যাশা এবং দোজখের অগ্নি থেকে পানাহ কামনা। (এমনিভাবে) যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোজাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তাকে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন। অতঃপর বেহেস্তে প্রবেশ পর্যন্ত তার আর কোন পিপাসা হবে না।’ (বায়হাকী)।

এসএইচ-০৪/৩০/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)