ফুরিয়ে যাচ্ছে গোটা রমযান মাস

আজ রোববার ২৭ রমযান। সময়ের গতিময়তার পথ ধরে একে একে ফুরিয়ে যাচ্ছে গোটা রমযান মাস। রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের এই পবিত্রতম মাসের বিদায় বেলা চলছে। এখন শুধু হিসাব নিকাশের পালা। গতকাল পালিত হলো পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর। আর এ রাতে নাযিল হয়েছে পবিত্র কুরআন। ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে গত রাতে আল্লাহর কাছ থেকে যারা গোণাহ মাফ করাতে পেরেছে তারা সফল হয়েছে। পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর একমাত্র মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের জন্যই দান করা হয়েছে। অন্য নবীর উম্মতগণ এ রজনীর মত উত্তম রজনী পায়নি। যার কারণে অনেকে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত হওয়ার আশা প্রকাশ করেছে। আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবার পবিত্র রমযানের সমাপ্তি হতে পারে। এ জন্য গত শুক্রবার জুমাতুল বিদা তথা রমযানের শেষ জুমা পালিত হয়েছে।

আর কয়েকদিন পর ঈদুল ফিতর। এখন শুধু হিসাবের পালা। পবিত্র রমযান মাসে কতটি রোযা পরিপূর্ণভাবে হক আদায় করে পালন করতে পেরেছি, আমাদের গোণাহ কী পরিমাণ মাফ করাতে পেরেছি আর কতটুকু তাক্বওয়া অর্জিত হয়েছে আমাদের মধ্যে। এসব হিসেব নিয়ে আত্মসমালোচনা করলেই ফুটে উঠবে পুরো রমযানের কর্মতৎপরতার চিত্র। পবিত্র রমযান পাওয়ার পরও যে ব্যক্তি গোনাহ মাফ করাতে পারেনি তার জন্য দুর্ভাগ্য। হয়তবা এ রমযানই অনেকের জীবনের শেষ রমযান বা শেষ শবে ক্বদর। রমযানের প্রশিক্ষণ কি পরিমাণ গ্রহণ করতে পেরেছি, যা অর্জন করেছি তা দিয়ে কী বাকি ১১টি মাস সুষ্ঠুভাবে অতিবাহিত করতে পারবো? যদি বিবেকের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর আসে তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। নচেৎ এখনো সময় আছে রমযানের বাকী দিনগুলোতে রমযানের শিক্ষা গ্রহণ করে উপকৃত হতে পারি।

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যখন ক্বদরের রাত্রি শুরু হয়, তখন জিব্রাইল (আঃ) ফেরেশতাদের দলসহ দুনিয়াতে অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহর এমন সব প্রত্যেক বান্দার জন্য দোয়া করতে থাকেন যারা দাড়িঁয়ে বা বসে আল্লাহর যিকির করতে থাকে। অত:পর যখন বান্দাদের ঈদের দিন উপস্থিত হয় তখন আল্লাহ তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের নিকট গৌরব প্রকাশ করেন এবং বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ, বল দেখি সেই প্রেমিক প্রেমিকাদের কি প্রতিদান হতে পারে যে আপন কাজ সম্পন্ন করেছে? উত্তরে তারা বলেন, হে পরোয়ারদেগার, তার পারিশ্রমিক পুরোপুরিভাবে দেয়াই হচ্ছে তার প্রতিদান। তখন আল্লাহ বলেন, হে আমার ফেরেশতাগন, আমার বান্দাহ ও বান্দীগন যারা তাদের উপর অর্পিত ফরয যথাযথভাবে পালন করেছে অত:পর সে (নিজের ঘর হতে ঈদগাহের দিকে) উচ্চ স্বরে দোয়া করতে করতে বের হয়েছে, আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম, আমি নিশ্চয়ই তাদের দোয়া কবুল করবো। তারপর তিনি বলেন, যাও (হে আমার বান্দাগন) আমি নিশ্চয়ই তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। নবী করীম (সাঃ) বলেন, অত:পর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ির দিকে ফিরে যায়। (বায়হাকী)।

এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি এ কুরআনকে কদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম ও কল্যাণময়’ (সূরা আল কদর : ১-৩)। এই রাত কোন মাসে? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রমযান এমন মাস যাতে কুরআন নাজিল হয়েছে’ (সূরা বাকারা : ১৮৫)। এই রাত রমযানের কোন তারিখে? রাসূলুল্লাহ সা: একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি। ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিম, ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্র্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে- হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেছেন, নবী করিম সা: বলেছেন, ‘কদরের রাতকে রমজানের শেষ দশ রাতের কোন বেজোড় রাতে খোঁজ করো।’

হজরত আবু বকর রা: ও হজরত আবব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হাদিস থেকেও এই একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য কোনো কোনো ইসলামী মনীষী নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যামে রমজানের ২৭ তারিখের রাতে (অর্থাৎ ২৬ রোজার দিবাগত রাতে) শবে কদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা: এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি; বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন।

এসএইচ-০৪/০২/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)