বিদায় নেবে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমযান

যে বিশেষ দোয়া

আজ মঙ্গলবার ২৯ রমযান। আজ বা কালকের মধ্যেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমযান। চাঁদ দেখে রোযা রাখা এবং চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ করার কথা হাদীসে উল্লেখ আছে। তাই রমযানের চাঁদ দেখে রোযা শুরু করা হয় আর শাওয়ালের চাঁদ দেখে ঈদ করা হয়ে থাকে। কিন্তু মেঘের কারনে চাঁদ দেখা না গেলে রমযান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করার জন্য রাসূল (সাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন।

বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে : “ তোমরা রোযা রাখবে না যতক্ষণ চাঁদ দেখতে পাবে না এবং রোযা ভাংবে না যতক্ষণ চাঁদ দেখতে পাবে না। (২৯ তারিখ) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সেই মাসের (ত্রিশ) দিন পূর্ণ করে লও।” তাবেয়ী তাউস বলেছেন : আমি মদীনায় হযরত ইবনে ওমর ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাঁদের নিকট এক ব্যক্তি রমযান মাসের চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেয়।

তাঁরা দুই জনই তা গ্রহণ করলেন এবং বললেন, “রাসূলে করীম (সাঃ) রমযান মাসে চাঁদ দেখার ব্যাপারে একজনের সাক্ষ্য গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন কিন্তু রোযা খোলার ব্যাপারে দুইজনের সাক্ষ্য ছাড়া রোযা খোলার অনুমতি দিতেন না” (দারে কুতনী, তিবরানী ফিল আউসাত)। চাঁদ দেখা গেলে দীর্ঘ এক মাসের তাকওয়া অর্জনের ট্রেনিং কোর্স রমযান মাসের রোযা পালনের সামগ্রিক ইবাদতেরও শেষ হবে। উদ্দেশ্য থাকবে বাকি ১১ মাস যেন এই ট্রেনিং-এর আলোকে নিজেদেরকে পরিচালিত করতে পারি। যে তাকওয়ার গুণাবলী আমরা রোযা থেকে অর্জন করেছি বাকি জীবন যেন সে আলোকে পরিচালিত করতে পারি সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

রাসূল (স.) হিজরত করে দেখতে পান মদিনাবাসী বছরে দুটি উৎসব পালন করছে। উৎসব দুটিতে তারা খেলা-ধুলাসহ তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য লালন করছে। উৎসব দুটির একটির নাম নাইরোজ এবং অপরটির নাম মেহেরজান। নবী (স.) মুসলমানদের জন্য এদুটির পরিবর্তে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামক দুুটি পবিত্র উৎসব প্রবর্তন করেন। হযরত আনাস (রা.) বলেন, মদিনায় নবী (স.) হিজরত করে আসার পর দেখলেন, মদীনাবাসী দুদিন খুব আনন্দ উৎসব করছে।

তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুদিনে তোমরা কী কর? তারা বললেন, আমরা জাহিলিয়্যাতের যুগে এদুটো দিন খেলাধুলা, আমোদফুর্তি করতাম। নবী (স.) বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের এ দুটো দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি দিন প্রদান করেছেন। তার একটি হলো ঈদুল আযহারর দিন ও অপরটি হলো ঈদুল ফিতরের দিন (সনানু আবী দাউদ, হাদীছ নম্বর-১১৩৬)।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম স্বীয় গ্রন্থে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন : “নবী করীম (সাঃ) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদের ময়দানে চলে যেতেন। সর্বপ্রথম তিনি নামায পড়াতেন। নামায পড়ানো শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন। তখন লোকেরা যথারীতি নিজেদের কাতারে বসে থাকতো। এ সময় নবী করীম (সাঃ) লোকদেরকে ওয়াজ নসীহত করতেন, শরীয়তের আদেশ নিষেধ শোনাতেন। তখন যদি কোন সৈন্য বাহিনীকে কোথাও পাঠাবার ইচ্ছা করতেন তাহলে তা পাঠাতেন এবং কোন বিশেষ বিষয়ে নির্দেশ জারি করার উদ্দেশ্য থাকলে তাও করতেন।

অতঃপর তিনি ঈদগাহ হতে প্রত্যাবর্তন করতেন।” ইবনে মাযাতে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, “রাসূলে করীম (সাঃ) ঈদের নামাযের ময়দানে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরে আসতেন।” ঈদুল ফিতরের দিনে সকাল বেলা নামাযের জন্য বের হবার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন : “রাসূলে মাকবুল (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হবার পূর্বে আহার করতেন।” ঈদুল ফিতরের সকাল বেলা কিছু খাওয়ার তাৎপর্য সুস্পষ্ট। দীর্ঘ ১ মাস রোযা পালন করা হয়েছে। এ সময়ে সকাল বেলাসহ সারাদিনে কিছুই পানাহার করা হয়নি।

আজ এ ঈদের দিনে সকাল বেলা যে দিন রোযা রাখতেছে না রোযা রাখা হারামÑ কিছুই না খেলে এদিনও রোযার মতই মনে হবে। অথচ মন মানসিকতা ও মনস্তত্বের দিক দিয়ে ইহা মোটেই বাঞ্চনীয় নয়। সহীহ আল বুখারীতে হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন, “নবী করীম (সাঃ) ঈদের দিনে ময়দানে যাতায়াতের পথ পরিবর্তন করতেন।” অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে আসতেন না। ফিরে আসতেন অন্য পথ দিয়ে।

হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে যেতেন এবং সকলকে সাথে নিয়ে ঈদের নামায পড়তেন। অথচ মসজিদে নববীতে এক রাক‘আত নামাযে এক হাজার, কোন কোন বর্ণনায় দশ হাজার ও পঞ্চাশ হাজার রাক‘আত নামাযের সাওয়াব লাভের সুসংবাদ রয়েছে। এতদসত্ত্বেও নবী (স.) মসজিদে নববীতে ঈদের নামায না পড়ে সকলকে নিয়ে ঈদগাহে চলে যেতেন এবং সেখানে নামায আদায় করতেন। তাই আলিমদের মত হলো, ঈদগাহে নামায পড়া উত্তম। অবশ্য মসজিদে পড়ে নিলেও ঈদের নামায আদায় হয়ে যাবে, তবে বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের নামায না পড়া ভাল। (প্রাগুক্ত)।

বৃষ্টির কারণে মসজিদে ঈদের নামায পড়া জায়েয আছে। হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার ঈদের দিনে বৃষ্টি হল, তখন রাসুল (স.) তাদেরকে নিয়ে মসজিদে ঈদের নামায পড়লেন। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৬২)। এতে বুঝা যায়, বৃষ্টি বা অন্য কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকলে ঈদের নামায মসজিদে পড়া জায়েয।

ঈদের দিনে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা রাসূল (সাঃ) এর আমল হতে প্রমাণিত। তাররানীতে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে করীম (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “ তোমরা তোমাদের ঈদ সমূহকে তাকবীর বলার সাহায্যে সুন্দর আনন্দমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ করে তোল।” ইমাম যুহরী বলেছেন : “নবী করীম (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে ঘর হতে বের হয়ে নামাযের স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর বলতে থাকতেন।”

এসএইচ-০২/০৪/১৯ (অনলাইন ডেস্ক)