চা-আটা না কিনলে মিলছে না তেল!

রংপুরে ফ্রেশ ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের সঙ্গে একই কোম্পানির চা-পাতা ও আটা কিনতে শর্তারোপের অভিযোগ উঠেছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিবেশকরা এসব শর্তে ভোজ্যতেল কিনতে বাধ্য করায় সাধারণ ক্রেতাদের কাছেও একই শর্তে তারা গত কয়েক দিন তেল বেঁচে আসছিল।

বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসায় রোববার (৮ মে) জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বাজারে বাজারে গিয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর এই শর্ত তুলে নিয়ে সোমবার (৯ মে) থেকে এককভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেল বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

রংপুরের ধাপ বাজার, নবাবগঞ্জ বাজার ও সিটি বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, পরিবেশকদের কাছ ভোজ্যতেল কিনতে গেলে ২০ লিটার রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের তেলের সঙ্গে ২ কেজি চা-পাতা এবং ফ্রেশ তেলের ২০ লিটারের বোতলের সঙ্গে ৩ কেজি চা-পাতা কিনতে হয়েছে তাদের।

তবে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে রোববার (৮ মে) কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে যাবার পর সোমবার (৯ মে) ডিলাররা আর বোতলজাত ভোজ্যতেলের সঙ্গে চা-পাতা বা আটা কেনার শর্ত দেননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোমবার (৯ মে) সন্ধ্যায় সিটি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানালেন, আজ শর্ত ছাড়াই তারা পরিবেশকদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তাই খুচরা ক্রেতাদেরও আর বোতলজাত তেলের সঙ্গে আটা বা চাপাতা কিনতে বলছেন না। তাদের অভিযোগ, পরিবেশকরা তাদের বাধ্য করলে ক্রেতাদের ওপর এমন শর্ত চাপিয়ে দেওয়া ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, ‘শর্ত দিয়ে ভোজ্যতেল বিক্রি এবং বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা পরিবেশকদের ডেকে নিষেধ করেছি। বাজার মনিটরিং করে দেখেছি। এখন শর্ত ছাড়াই তেল বিক্রি হচ্ছে।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তা আফসানা পারভীন জানান, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত কয়েক দিন আমরা বাজারে বাজারে টানা অভিযান চালিয়েছি। বোতলজাত ভোজ্যতেল মজুদ করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ পেয়ে বেশ কিছু খুচরা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তেল উদ্ধার করে গায়ে লেখা দামেই বিক্রি করতে বাধ্য করেছি। রোববার (৮ মে) নগরীর শাহী ভান্ডার, মণ্ডল স্টোর ও বাবুল স্টোরে মজুত করা সয়াবিন তেল বোতলে লেখা দামে বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছি। সোমবার (৯ মে) বাজার মনিটরিং করা হলে এ ধরণের আর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে জানান আফসানা পারভীন।

তবে বাজারের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য সুযোগ বুঝে কোম্পানিগুলো একটি পণ্যের সঙ্গে আরেকটি পণ্য চাপিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা করছে এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক খন্দকার ফকরুল আনাম।

তিনি বলেন, সবার ক্রয় ক্ষমতা সমান নয়। নির্দিষ্ট বা নিম্ন আয়ের মানুষের একসঙ্গে দুটি পণ্য কেনার প্রয়োজন নাও থাকতে পারে। শর্ত দিয়ে পণ্য বিক্রি রোধের নতুন এই কৌশল প্রতিরোধে প্রশাসনকে বাজারের ওপর নজর রেখে চলার আহ্বান জানান তিনি।

এসএইচ-১৭/০৯/২২ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)