পাড় ভাঙার শব্দে আতঙ্ক ছড়ায় নদীবহুল বৃহত্তর রংপুরের জেলাগুলোতে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ ছোট-বড় অর্ধশতাধিক নদ-নদীর ভাঙন রোধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেকটাই ভঙুর এসব জেলায়। শুষ্ক মৌসুমে খরায় পুড়ে চৌচির হয় ক্ষেত; আর বর্ষায় বান ভাসিয়ে নেয় সব। দারিদ্র্যের চোরাবালিতে কেবলই যেন ডুবতে থাকে প্রায় দেড় কোটি জনঅধ্যুষিত এ জনপদ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত ১০ জেলার শীর্ষে রয়েছে বৃহত্তর রংপুরের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও সদর। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নদীভাঙন আর বন্যাকে। সারা বছরের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নাকানি-চুবানি খেয়ে কোনো রকম বেঁচে থাকলেও এসব এলাকার মানুষ সুযোগ পান না উঠে দাঁড়াবার।
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকানো ছাড়া এবারও বড় কোনো প্রস্তুতি নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এ অবস্থায় তিস্তাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর স্থায়ী ব্যবস্থাপনার জন্য আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
গত ৬ মে রংপুর নগরীতে বড় ধরনের সমাবেশের পর জুন মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি দিয়েছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।
ভাঙনপ্রবণ নদ-নদীগুলোর বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু ভাঙন রোধে ছোটখাটো জরুরি কিছু কাজের প্রস্তুতি ছাড়া বড় কোনো পরিকল্পনা নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (উত্তরাঞ্চল) রংপুরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু তাহের বলেন, এ অঞ্চলে এখনও বর্ষা আসেনি; হয়নি বন্যাও। ভাঙনপ্রবণতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধে কাজও শুরু হবে তাৎক্ষণিক। এজন্য বেশকিছু জিও ব্যাগ সংগ্রহ করা হয়েছে।
নদী বাঁচাও সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নদী ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির দাবিতে বিশেষ করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জোরালো হয়ে ওঠেছে। এজন্য আগামী বাজেটেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ চান তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।
শফিয়ার রহমান আরও বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন ১০ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি সাহায্যে নয়, পদ্মা সেতুর মতো নিজেদের টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবিতে জুন মাসজুড়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে চলেছে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।
এসএইচ-১২/১৬/২৩ (উত্তরাঞ্চল ডেস্ক)