এখনও শুয়ে আছেন লতিফ সিদ্দিকী!

টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে তিনি রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। সেখানেই রাত্রিযাপন করেন। তিনি তার দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এখনো লতিফ সিদ্দিকী সেখানে শুয়ে রয়েছেন।

সোমবার দুপুরে ধর্মঘটস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিসি অফিসের সামনে ডেকোরেটরের পর্দা দিয়ে একটি ছোটখাটো প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। ভেতরে একটি চৌকিতে সাজানো-গোছানো বিছানার শুয়ে আছেন আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তাকে ঘিরে কিছু নেতাকর্মী কেউ দাঁড়িয়ে আছেন আবার কেউ বসে বসে পত্রিকা পড়ছেন। প্যান্ডেলের বাইরেও কিছু নেতাকর্মীর ভিড়।

নেতাকর্মীরা জানান, রোববার সন্ধ্যার পর ঠান্ডা পড়লে এই প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়। রাতে তিনি এখানেই অবস্থান করেন।

রোববার দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ির বল্লবভবাড়ি ও সরাতৈল এলাকায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা হয়। এ সময় বহরে থাকা চারটি গাড়ি ভাঙচুর এবং তার অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। লতিফ সিদ্দিকী হামলার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীর কর্মীদের দায়ী করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, হামলাকারীদের গ্রেফতার ও কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকবেন বলে জানান।

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী সোহেল হাজারীর নির্দেশে স্থানীয় চেয়ারম্যান হযরত তালুকদার, তোতা ও তার ছেলের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। আমার নির্ধারিত সভা ছিল গোহালীয়াবাড়ি। সেখানে গাড়ি বহর পৌঁছামাত্র ২০-২৫টি মোটরসাইকেলে করে এসে দুর্বৃত্তরা ইটপাটকেল মারা শুরু করে। সেখানের সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে গেলে দুর্বৃত্তরা মিছিল নিয়ে সেই বাড়িতেও হামলা করে। তারা আমার চারটি গাড়ি ভেঙে চুরমার করে দেয়। অনেকে আহত হয়েছেন। এ হামলায় কালিহাতী থানার ওসির প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নিশ্চয়তা না পেলে আমি এখান থেকে উঠব না। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

কালিহাতী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন বলেন, রোববার বিজয় দিবসের জন্য ব্যস্ততা ছিল বেশি। তারপরও হামলার ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে যাই। ওনার (লতিফ সিদ্দিকী) সঙ্গে কথাও বলেছি। এখানে আমার কী দোষ। আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মহাজোট সরকারে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যও হন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টাঙ্গাইল-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের একটি অনুষ্ঠানে হজ, তাবলিগ জামাত এবং দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য করে দেশ ও বিদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বোচ্চ সমালোচিত হন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

এ কারণে ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তার নামে বেশ কয়েকটি মামলা হয়। এ অভিযোগেই তিনি দেশে ফিরে আত্মসমর্পণও করেন। কয়েক মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান। কারাগার থেকে মুক্ত হয়েই তিনি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে হাসান ইমাম খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিএ-০৮/১৭-১২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)