লাশ আটকে টাকা দাবি, ৩৯ দিন পর ফিরলো দেশে!

সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী এক বাংলাদেশির মৃতদেহ নানা কৌশলে আটকে রাখেন আরেক বাংলাদেশি প্রবাসী ময়না মিয়া। একপর্যায়ে তিনি (ময়না) লাশ দেশে পাঠানোর কথা বলে নিহত আজিজের স্বজনদের কাছে মোটা অংকের টাকা চেয়ে বসেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শারজায় বসবাসকারী বাংলাদেশি ও দুবাই কনসাল জেনারেলের উদ্যোগে ৩৯ দিন পর গত বৃহস্পতিবার আজিজের লাশ দেশে পাঠানো হয়। পরদিন ১১ জানুয়ারী সকাল ১১টায় জানাযার নামাজ শেষে মৃতদেহ দাফন করা হয়।

সূত্র জানায়, আবদুল আজিজ (৫০) নামের এক বাংলাদেশি শ্রমিক গত বছরের ২ ডিসেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজার একটি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাট্রাই গ্রামে। এ সময় ময়না মিয়া (৪০) নামের আরেক বাংলাদেশি নানা কৌশলে তাঁর (আজিজ) লাশ আটকে রাখেন। ময়নার এবং মৃত আজিজের বাড়ি একই এলাকায়।

তবে প্রতারক ময়না মিয়া দুবাই কনসাল জেনারেলের কাছে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে লিখিত মুচলেকা দেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজিজ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে শারজায় ছিলেন। ২ ডিসেম্বর ময়না স্বজনদের মুঠোফোনে তাঁর মৃত্যুর সংবাদটি জানান। পরে ময়না আবারও ফোনে বলেন, অজিজের লাশ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে তিনি চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ পড়বে। ওই টাকা না দিলে লাশ পাঠানো সম্ভব হবে না। তিনি স্বজনদের কাছে ওই টাকার ব্যবস্থা করে রাখতে বলেন।

এ অবস্থায় তাঁরা উৎকণ্ঠায় পড়ে যান। স্বজনেরা বিভিন্নভাবে শারজায় বসবাসকারী কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তাঁদের পরামর্শে দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের কাছে লিখিত আবেদন পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসেন খাঁন ময়নাকে তাঁর কার্যালয়ে ডেকে আনেন।

এ সময় বাংলাদেশি বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের কয়েক জন নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে ময়না প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি লিখিত মুচলেকা দেন। পরে কনসাল জেনারেলের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বিমানে আজিজের লাশ দেশে পাঠানো হয়। প্রতারণার বিষয়ে ময়নার দেওয়া লিখিত মুচলেকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

কনসাল জেনারেল উদ্যোগ না নিলে লাশ আসতে আরও বিলম্ব হতো জানিয়ে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক বলেন, আজিজ ও ময়নার বাড়ি একাই গ্রামে এবং পাশাপাশি। ময়না মিয়ার এ কাজটা মোটেই সমীচীন হয়নি। এ আচরণে আমরা খুবই ব্যথিত। ময়নার মতো লোকেরাই বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেন।

এসএইচ-৩৪/১২/১৯ (আঞ্চলিক ডেস্ক)