৭০ বছর পর বন্দিরা পেল নতুন ঠিকানা

কিশোরগঞ্জ কারাগারের ৭০ বছর পর বন্দিরা পেল নতুন ঠিকানা। শনিবার শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামসংলগ্ন এলাকার পুরোনো কারাগার থেকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের পাশে খিলপাড়া এলাকায় নবনির্মিত কারাগারে।

কড়া নিরাপত্তায় শনিবার সকাল সাতটা থেকে এক হাজার ৩৫৭ জন বন্দিকে নতুন ঠিকানায় স্থানান্তর করা হয়ে।

এর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই কারাগারের সব কাগজপত্র ও মালামাল নিয়ে অফিস গোছানো হয়েছে বলে জানান কিশোরগঞ্জ কারাগার কর্তৃপক্ষ।

এদিকে স্থানান্তরের সুবিধার্থে শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দুদিন বন্দিদের সঙ্গে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাৎকার বন্ধ রাখা হয়েছে। নতুন কারাগারে নেওয়ার পর রোববার থেকে সাক্ষাৎ কার্যক্রম চালু হবে। তবে এ সময় কারো মুক্তির আদেশ কারাগারে পৌঁছলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।

নবনির্মিত কারাগারটির কাজ ২০১৮ জুনে শেষ হওয়ার পর নতুন কারাগারটি গত বছরের ১ নভেম্বর ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ পুরাতন কারাগারে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বন্দিদের পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিশোরগঞ্জ কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জ পুরোনো কারাগারটি মহকুমা কারাগার হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত হয়।

ব্রিটিশ আমলে জেলায় এ কারাগারটি তৈরির সময় তাতে বন্দির ধারণক্ষমতা ছিল ২৪৫ জন। সেখানে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ (ছয় গুণ) বন্দি এ কারাগারে রাখা হতো।

কারাগারে দুজন প্রধান কারারক্ষী ও ৩০ জন কারারক্ষীর পদ শূন্য থাকায় এত বিপুলসংখ্যক বন্দির সার্বিক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে কর্তৃপক্ষ ও কারারক্ষীদের হিমশিম খেতে হতো।

২০০২ সালে এক হাজার ৫০ জন বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নতুন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার নির্মাণের কাজ হাতে নেয় সরকার। আর এ জন্য ১৯৯৭ সালে শহরের উপকণ্ঠে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়কের পাশে খিলপাড়া এলাকায় ২৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়।

গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৬৮ কোটি ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকার প্রকল্প কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন ধাপে এ কাজ পায় সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের জুনে কাজ শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বুঝিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষের হাতে।

গত বছরের ১ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিশোরগঞ্জে জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ জানান, পুরাতন কারাগারে বন্দিদের ঘুমাতে, গোসল করতে খুবই কষ্ট হতো। এখন কেন্দ্রীয় কারাগারের মানের এ কারাগারে বন্দিরা একটু স্বস্তি পাবে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরোনো কারাগার থেকে নতুন কারাগারে বন্দিদের স্থান্তরের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির প্রধান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল থেকে বন্দিদের স্থানান্তরের কাজ শেষ করা হয়েছে। নতুন কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার-১ উদ্বোধন হওয়াতে বন্দিদের এ সমস্যা থাকবে না। আর কারাগারেও নতুন লোকবল বাড়ানোতে বন্দিদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে কর্তৃপক্ষ ও কারারক্ষীদের আর হিমশিম খেতে হবে না।

এসএইচ-৩৭/১২/১৯ (আঞ্চলিক ডেস্ক)