ভোটের রাতে গণধর্ষণের ঘটনায় চরজব্বার থানার ওসিকে প্রত্যাহার

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে চরজব্বার থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে তাকে প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ।

তিনি জানান, সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে ওসি নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে নিজাম উদ্দিনকে চরজব্বার থানা থেকে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে চরজব্বার থানার ওসি হিসেবে সুধারাম মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাহেদ উদ্দিনকে পদায়ন করা হয়েছে বলে জানান এসপি।

গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রাতে সুবর্ণচরের চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্যবাগ্যা গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে এক গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের শিকার ওই নারীর অভিযোগ, ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সমর্থকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এরপর রাতে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের ‘সাঙ্গপাঙ্গরা’ বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। পরদিন সকাল থেকেই বর্বর এই ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।

দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ছবি দিয়ে ধিক্কার জানাতে থাকেন; কিন্তু তখনও সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ঘটনাস্থলে যাননি। এত বড় একটি ঘটনাকে তিনি গুরুত্বই দেননি। শুরু থেকে পুলিশের এই কর্মকর্তা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠে।

মামলার বাদীর অভিযোগ উল্টে দিয়ে এজাহারে ভিন্ন বিষয় লেখা, আসামির তালিকা থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের নাম বাদ, আসামিদের গ্রেফতারে গরিমসিসহ পুরো ঘটনা অন্য দিকে প্রবাহের সব চেষ্টাই করেছেন তিনি।

পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি গত ৫ জানুয়ারি সংবাদ মাধ্যমে ওঠে আসে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্ত নারী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা সত্ত্বেও মামলার প্রাথমিক এজাহার থেকে রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়েছিলেন পুলিশের যেসব সদস্য, তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। অপরাধীদের রেহাই দিতে চাওয়া ওই পুলিশ সদস্যরাও সমান অপরাধী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘ঘটনার শুরু থেকেই চরজব্বার থানার ওসি নিজাম উদ্দিন অতি উৎসাহী হয়ে ঘটনাটির সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের সংশ্নিষ্টতা নেই বলে প্রচার করেছেন। তিনি যদি প্রথম থেকে কঠোরভাবে বিষয়টি দেখতেন তাহলে এতদূর গড়াতো না, আওয়ামী লীগেরও বদনাম হতো না। রুহুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নানা অপকর্ম করে এলেও ওসির সঙ্গে সখ্য থাকায় তাকে এজহারে আসামি করা হয়নি।’

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ধর্ষিত ওই নারীকে হাসপাতালে দেখতে গেলে তিনি চরজব্বার থানাপুলিশ মামলার এজাহার থেকে রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

ডিআইজি বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় রুহুল আমিনসহ এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিরা পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।

বিএ-০৭/১৬-০১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)