কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নির্মাণাধীন ছাদ ধসে শ্রমিক নিহত

কুষ্টিয়ায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্মাণাধীন ছাদ ধসের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ওই ব্যক্তি শ্রমিক হিসেবে ওই ভবনে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬ শ্রমিক।

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে হাসপাতাল ভবনের নির্মাধীন ছাদ ধসে পড়ে। নিহত শ্রমিকের নাম বজলুর রহমান (৬০)। তার বাড়ি জেলার কুমারখালী উপজেলার চড়াইকোল গ্রামে। আহত শ্রমিকদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমকিভাবে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দুর্ঘটনার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এছাড়া সেখানে নির্মাণ কাজের তত্ত্বাধানের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের কোন কর্মকর্তাকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল ভবনের গাড়ি বারান্দার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। সেখানে কাজ করছিলেন শতাধিক নির্মাণ শ্রমিক। কাজ চলাকালে বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দে ওই ছাদ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় এক শ্রমিক ছাদের নিচে চাপা পড়েন। আহত হন আরও ৬ শ্রমিক।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। প্রায় ২ ঘন্টার উদ্ধার কাজ শেষে ছাদের নিচে চাপাপড়া শ্রমিক বজলুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সাধারণত নির্মাণাধীন ছাদের সাটারিংয়ে স্টিলের পাইপ ব্যবহার করা হলেও এখানে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া ছাদে যে পরিমান রড দেওয়ার কথা তার থেকে কম রড ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই দুই কারণে ছাদের ঢালাই কাজ চলাকালে এভাবে ছাদ ধসে পড়ে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জহুরুল হকের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। অন্যদিকে উদ্ধারকাজ চলাকালে নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধানে থাকা কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের কোন কর্মকর্তাকেও সেখানে দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আজাদ জাহানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. আশরাফুল হক দারার নেতৃত্বে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, সাটারিংয়ে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার ও নিচে বালি মাটি থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রিপোর্ট দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

প্রকল্প পরিচালক ডা. আশরাফুল হক দারা বলেন, আমি দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তখন সাটারিংয়ে বাঁশের খুঁটি দেখে দুর্ঘটনার আশঙ্কা জেগেছিল আমার মনে। এখন সেই আশংকাই সত্যি হল।

বিএ-২২/১৭-০১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)