আমাদের ভবনে আগুন লেগেছে। এই মুহুর্তে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এখান থেকে বেরুতে পারবো কি না জানি না। আমার জন্য সবাই দোয়া করো এবং মাফ করে দিতে বলো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আটকা পড়ার পর মির্জাপুরের নাহিদুল ইসলাম তুষার তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার নদীকে ফোনে এ কথা গুলো বলেন। নাহিদুল ইসলাম তুষার মির্জাপুর উপজেলা গোড়াই ইউনিয়নের ভানুয়াবহ গ্রামের মো. ইছাক আলীর ছেলে।
তিনি অভিশপ্ত ওই টাওয়ারের দশ তলায় অবস্থিত হ্যারিটেজ ট্রাভেলস এজেন্সিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত চার বছর আগে মাহমুদার আক্তার নদীর সঙ্গে তুষারের দাম্পত্য জীবন শুরু হলেও তাদের কোন সন্তান ছিলোনা।
বৃহস্পতিবার ভবনে আটকা পড়ার পর মোবাইল ফোনে তুষার তার বাবা এছাক আলী, মা নুরুন্নাহার, বড় ভাই তুহিন ছোট ভাই শিশিরের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় সে তাকে বাঁচানোর জন্য তাদের কাছে সাহায্য চান। কিন্ত কেউ তার এই করুণ আর্তনাতে সারা দিতে পারেন নি। একথাগুলো বলার পর বেলা দুইটার পর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়।ভয়াবহ আগুনোর লেলিহান শিখায় অন্যদের সাথে তুষারের জীবনপ্রদীপও মুহুর্তের মধ্যে কেড়ে নেয়।
শুক্রবার ভোরে তুষারের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌছালে সেখানে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের অবতারনা হয়। ভাইয়ের লাশ সামনে রেখে নিশ্চিত মৃত্যু পথযাত্রী ভাইকে বাঁচাতে না পারায় ছোট ভাই তুহিনের আহাজারীতে আকাশ-বাতাস বাড়ি হয়ে উঠে। উপস্থিত সকলেই তখন অশ্রু সজল হয়ে উঠেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বনানী থেকে তুষারের মরদেহ মির্জাপুরের ভানুয়াবহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে শতশত মানুষ সেখানে ভীড় জমায়। এসময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকাল দশটায় গ্রামের বাড়িতে তার নামাজে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
জানাজায় এলাকার শতশত মানুষ অংশ নেন।
এদিকে বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডে মির্জাপুরের ছেলে তুষার নিহত হওয়ার খবরে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একাব্বর হোসেন এমপি।
বিএ-০৮/২৯-০৩ (আঞ্চলিক ডেস্ক)