এক মাস দুইদিন আগে দুই কাঠা জমি বিক্রি করে ও ৫ লাখ টাকা সুদে নিয়ে সৌদিআরব গিয়েছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রঘুনাথপুর চালাপাড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে ইউনুস আলী।
গত বুধবার রাতে হঠাৎ সৌদিআরব থেকে এক আত্মীয় মোবাইল ফোনে সড়ক দুর্ঘটনায় ইউনুস আলী নিহত হওয়ার খবর পরিবারকে জানান। এ খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে রঘুনাথপুর চালাপাড়া গ্রামে। স্বামীর এমন খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী তাসলিমা খাতুন। সেই সঙ্গে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ ইউনুস আলীর মা-বাবা।
ইউনুস আলীর বাবা আব্দুল খালেক বলেন, ইউনুস আলী রিকশা চালিয়ে ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে এক মাস দুইদিন আগে দুই কাঠা জমি বিক্রি করে ও ৫ লাখ টাকা সুদের ওপর নিয়ে সৌদিআরব পাড়ি জমায় ইউনুস। দুর্ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার কথা হয় তার সঙ্গে। তখন ইউনুস জানিয়েছে বুধবার মদিনা যাবে। ওই দিনই তার প্রথম কাজে যোগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজে যোগ দেয়া হলো না ইউনুস আলীর। বুধবার সকালে সৌদিআরবের সাকরা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১১ বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে রয়েছেন ফুলবাড়িয়ার ইউনুস আলী।
স্বামীর এমন মৃত্যুর সংবাদ শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে স্ত্রী তাসলিমা খাতুনের মাথায়। শাহাদত (৭), সুমাইয়া (৫) ও মারিয়া (ছয় মাস) নামে তিন শিশুসন্তান নিয়ে এখন দিশেহারা তাসলিমা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইউনুস আলীর বড় ছেলে শাহাদাত স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়ছে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন ইউনুসের স্ত্রী তাসলিমা। এখন আমার এতিম সন্তানদের কে দেখবে? যে জমিটুকু ছিল বিক্রি করে ও সুদের ওপর টাকা নিয়ে বিদেশ গিয়েছিল ইউনুস। এখন আমি এই সুদের টাকা কিভাবে শোধ করব? আপনারা আমার স্বামীর লাশটা আনার ব্যবস্থা করে দিন।
নিহত ইউনুস আলীর চাচাতো ভাই আব্দুর রউফ বলেন, একেবারেই দরিদ্র পরিবার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে, রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো ইউনুস। অনেক টাকা সুদের ওপর নিয়ে সৌদিআরবে গিয়েছিল। সেখান থেকে উপার্জনের টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল। এখন পরিবারের সদস্যরা দিশেহারা। ইউনুসের লাশটা দেশে আসবে কিনা তা নিয়েও আশঙ্কা পরিবারের। আমরা চাই তার লাশটা দ্রুত দেশে আসুক। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
বিএ-১২/০৪-০৫ (আঞ্চলিক ডেস্ক)