রোমিওকে ছেড়ে চলে গেল জুলিয়েট

‘রোমিও-জুলিয়েট’ ফেনীর আলোচিত ভিক্ষুক দম্পতি। ৫ জুন ঈদের দিন রোমিওকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান জুলিয়েট। এর আগে আদরের দুটি কন্যা সন্তানকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ পড়েন তারা।

২০১৬ সালের শেষের দিকে কোলজুড়ে ফুটফুটে কন্যা সন্তান নিয়ে ফেনীতে আসেন মানসিক ভারসাম্যহীন আবু বক্কর সিদ্দীক ও আমেনা আক্তার। রাস্তার পাশে ফুটপাতে সংসার পাতেন তারা।

শহরের রাজাঝিদিঘীর পাড়ে, কখনও কোনো সরকারি অফিস আদালতের বারান্দায় দিন-রাত পার করেছেন তারা। স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসা দেখে স্থানীয়রা তাদের নাম দেয় ‘রোমিও-জুলিয়েট’। একদিন তাদের আদরের সন্তানটি চুরি হয়ে যায় তাদের। নিজের সন্তানকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন ‘রোমিও-জুলিয়েট’।

২০১৭ সালের ১৫ মে। শহরের শিশু নিকেতন স্কুল মার্কেটের বারান্দায় আরও একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন ‘রোমিও জুলিয়েট’ দম্পতি। স্থানীয়রা নাম দেয় আনিসা আক্তার রানী। পুনরায় সন্তান পেয়ে তাদের আনন্দের আর সীমা থাকে না। মানুষের সহযোগিতায় আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে থাকে রানী।

কিন্তু তাদের সংসারে আবারও দুর্যোগ নেমে আসে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে রানী। পরে স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম তাকে আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ ডিসেম্বর রানী মারা যায়। পরে তাকে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ওই দিন হাসপাতালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মৃত সন্তানকে কোল থেকে কিছুতেই নামাতে দিচ্ছিলেন না আমেনা আক্তার। অপর দিকে কবর দেয়ার সময় আবু বক্কর সিদ্দিক সন্তানকে রেখে দিতে বার বার অনুরোধ করেন।

ফেনী পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহতাব উদ্দিন মুন্না জানান, শুনেছি ঈদের কয়েকদিন আগে মহিপালে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় আমেনা আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে কে বা কাহারা একটি ভ্যানগাড়িতে রেখে চলে যায়। সেখানে তার মৃত্যু হলে ঈদের দিন পৌর কবরস্থানে মেয়ের পাশে সমাহিত করা হয় তাকে।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ আবু বক্কর সিদ্দিককে সেলুনে নিয়ে চুল কেটে গোসল করিয়ে নতুন জামা কাপড় কিনে দেন তিনি। পরে তাকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অনুরোধ জানান। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্দিককে একটি রিকশা, থাকার জায়গা ও লেপ-তোষক কিনে দেন তিনি।

আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ফেনী শহরতলীর বাহিপুরের আবদুল আজিজ ও কদ বানুর ৫ সন্তানের মধ্যে কনিষ্ট সন্তান সে। বাবা আবদুল আজিজের কোনো কন্যা সন্তান না থাকায় ছোটবেলা থেকে আমেনা আক্তারকে লালন-পালন করেন। ভারসাম্যহীন সেই আমেনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সিদ্দিকের। পরে বিয়ে করে সংসার পাতে দু’জন। এ কারণে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।

বিএ-০৪/১১-০৬ (আঞ্চলিক ডেস্ক)