সাইক্লোন শেল্টার আজ বিলীনের পথে

বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের সময় দিশেহারা উপকূলবাসীর একমাত্র আশ্রয়স্থল সাইক্লোন শেল্টার। সেই আশ্রয় কেন্দ্র যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে নদী তীরের মানুষের জীবন রক্ষাই দায়। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে ঝালকাঠির বিষখালী নদীর তীরে।

সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের একাংশ।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময় পানির তোড়ে বিদ্যালয়ের একটি পানির ট্যাঙ্ক ও নলকূপ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বেজমেন্টের নিচের মাটি সরে পানি ঢুকে পড়েছে। যে কোনো মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে ভবনটি। আতঙ্কে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা স্কুলে এলেও সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকেন।

অথচ ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি অ্যান্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র চার বছর আগে এই প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি নির্মাণ করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। ওই সময় ভাঙন কবলিত বিষখালী নদীর মাত্র ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রূক্ষেপ করেনি।

তখন বলা হয়েছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদী শাসনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভবনটি ভাঙনের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইতোমধ্যে বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের পাশ দিয়ে যাওয়া সংযোগ সড়ক ও স্থানীয় বাজার বিলীন হয়ে গেছে। সরে গেছে সাইক্লোন সেল্টারের বেজমেন্টের নিচের মাটি। সেখানে ঢুকে পড়েছে পানি। ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিন পাশেই বিষখালীর পানি থৈ-থৈ করছে। বিদ্যালয়ে মোট ১৩৭ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ভয়ে ক্লাসে আসছে না অনেকেই। কমে গেছে উপস্থিতির সংখ্যা। যে কোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে ভবনটি।

শুধু বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটিই নয়, নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাজার, সড়ক, বসতঘর, ফসলি জমিসহ অসংখ্য গাছপালা। ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার ভয়ে তিনশতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল এই বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে অনেকেই সেখান থেকে নেমে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

অনেক দুর্যোগের সাক্ষী দেউরী গ্রামের বৃদ্ধ হাসেম আলী হাওলাদার। তিনি বলেন, বিষখালীতে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি চলে গেছে। আবহাওয়ার সংকেত শুনে আগে আশ্রয় নিতাম নদীর পাশের বিদ্যালয়ে। সরকার আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করে দিলেন। কিন্তু স্থান নির্ধারণ সঠিক হয়নি। নদীর পাশে এটি নির্মাণ করায় নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। আশ্রয় নেয়ার স্থানটি যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে আমরা যাবো কোথায়।

নদী তীরের বসিন্দা হাওয়া বেগম বলেন, বসতঘরের পাশের জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছিলাম, পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জমিও নদীতে চলে গেছে। প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। সরকার আমাদের নদী ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নিলে বেঁচে থাকতে পারতাম।

পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি রক্ষা জন্য বিভিন্ন দফেতরে অনেকবার জানিয়েও কোনো সমাধান পাইনি। এখন এটি নদীগর্ভে বিলীন হলে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পরবে। কর্তৃপক্ষের কাছে এটি রক্ষার দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ঝালকাঠি অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন বলেন, ভবন নির্মাণের সময় পাউবো নদী শাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও তা শেষ করেনি। এ কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাইক্লোন সেল্টারটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিএ-০৩/০৮-০৭ (আঞ্চলিক ডেস্ক)