একই জেলায় এক দিনেই ৪ খুন

কিশোরগঞ্জে এক দিনেই পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ চারজন খুন হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জে যৌতুক দাবি, জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং বাড়ির পাশে রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত বিরোধের জেরে বুধবার সকালে এ পৃথক খুনের ঘটনা ঘটে।

এদের মধ্যে যৌতুকের টাকা না পাওয়ার জের ধরে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি গ্রামের হালিমা খাতুন (৫৫) জামাই রনি মিয়ার ছুরিকাঘাতে মারা যান।

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরটেকি গ্রামের আলী আজগর মস্তোফা মুকুল (৬০) ছোট ভাই শামসুল মুসলিমিন মতির (৫৫) ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

করিমগঞ্জে পারিবারিক বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইদের হাতে সুলাল মিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

মিঠামইন উপজেলার ভরা গ্রামে বাড়ির পাশের রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত বিবদমান দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে শাহজাহান মিয়া (৪৫) নামে এক ব্যক্তি বল্লমের আঘাতে নিহত ও অন্তত ২০ ব্যক্তি আহত হয়।

এদের মধ্যে বড় ভাইকে হত্যার দায়ে ছোট ভাই শামসুল মুসলিমিন মতিকে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ এবং শাশুড়িকে হত্যার দায়ে রনি মিয়াকে আটক করেছে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরটেকি গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছোট ছেলে শামসুল মুসলিমিন মতি তার বড় ভাই আলী আসগর মস্তোফা মুকুলকে ডেকে নিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এলাকাবাসী ঘাতক ছোটভাই শামসুল মুসলিমিন মতিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার সকাল ৮টার দিকে জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ভরা গ্রামের ওপর দিয়ে কাঁচা রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গ্রামের হাবিব সরকার এবং আইয়ুব আলীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বল্লমের আঘাতে হাবিব সরকার সমর্থক গ্রুপের শাহজাহান মিয়া (৫০) নিহত হন ও ২০ জন আহত হয়।

নিহত শাহজাহান মিয়া একই গ্রামের মৃত কাছুম আলীর ছেলে। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মিঠামইন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির রাব্বানী জানান, নিহতের লাশ কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা রুজুর প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, বুধবার বেলা ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের দানাপাটুলি গ্রামের সৌদি প্রবাসী সায়মুদ্দিন মিয়ার স্ত্রী হালিমা খাতুন (৫৫) তার মেয়ে অরুণা আক্তারের স্বামী রনি মিয়ার (২৭) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ সময় নিহতের নাতি আনন্দ (৩) গুরুতর আহত হয়।

এলাকাবাসী ঘাতক রনি মিয়াকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। রনি একই ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের টিটু মিয়ার ছেলে। ৪ বছর আগে অরুণা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আনন্দ নামে একটি ৩ বছরের ছেলেও রয়েছে।

বিয়ের পর থেকেই রনি টাকা পয়সার জন্য অরুণা আক্তারের ওপর কারণে অকারণে নির্যাতন করায় দুবছর ধরে কোলের শিশু আনন্দকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

পরিবারের দাবি, মঙ্গলবার স্ত্রী অরুণা কিংবা শাশুড়ি হালিমার লাশ ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে রনি এসে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে হালিমা আক্তারকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে রনি। এ সময় তারই কোলের শিশু আনন্দ দৌঁড়ে নানির কাছে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত করে পাষণ্ড রনি।

হালিমা আক্তারকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এলাকাবাসী ঘাতক রণিকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর পর বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে পারিবারিক বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইদের হামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া গ্রামে সুলাল মিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় ৬ ব্যক্তিকে আটক করেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সূতারপাড়া গ্রামের সুলাল মিয়ার পরিবার এবং চাচাতো ভাই দুলাল মিয়ার পরিবারের ছেলেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটিকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে নারীরা জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরুষ সদস্যরা এগিয়ে এলে চাচাতো ভাইদের হামলায় সুলাল মিয়া নিহত হন।

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।মলার আপিল শুনানি।

বিএ-১৭/২১-০৮ (আঞ্চলিক ডেস্ক)