ফরিদপুরে দিন-দুপুরে জেলেকে পিটিয়ে হত্যা

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে মমিন খাঁ (৪৫) নামে এক জেলেকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে গেছে। রোববার বিকেলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে দুপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ৩৮ দাগ এলাকায় তার ওপর হামলা চালায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার নটাখোলা গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি।

মমিন খাঁ ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের জলিল মোল্লারডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মৃত সুলতান খাঁর ছেলে। তিনি (মমিন) বিবাহিত এবং তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। মমিন খাঁ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

এলাকাবাসী জানায়, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত ফরিদপুরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন। দুই জেলার মানুষের যাতায়াতের সংযোগস্থল জিন্দার খাঁ নামের একটি খাল। খালের এপারে ফরিদপুর আর ওপারে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা। খাল পারাপারের জন্য একটি ছোট নৌকা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নৌকাটি পরিচালনা করেন হরিরামপুর উপজেলার নটাখোলা গ্রামের জিন্দার খাঁ। ফরিদপুরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ভগবানের চর বাজারে ব্যবসা বাণিজ্য করেন এবং প্রতিদিনের বাজার সদাই সেখান থেকেই করে থাকেন।

গতকাল শনিবার রাতে ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিব হোসেন ওপার থেকে বাড়ি আসার সময় খালে নৌকা না পেয়ে নৌকার মাঝি জিন্দার খাঁর বাড়িতে যান তিনি। বাড়িতে গিয়ে জিন্দার খাঁকে না পেয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন রাকিব। জিন্দারের স্ত্রী নৌকাটি নিয়ে যেতে বলেন। নৌকায় তালা মারা রয়েছে বলে জানান রাকিব। জিন্দারের স্ত্রী রাকিবকে বলেন তালা ভেঙে নৌকা নিয়ে যাও, সকালে নতুন তালা কিনে দিও। এ কথার পর রাকিব নৌকা নিয়ে খাল পাড় হয়ে বাড়িতে চলে আসে।

এ দিকে রোববার সকালে নৌকার তালা ভাঙার বিষয়টি নিয়ে জিন্দার খাঁ ও তার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। দুপুরে ওপার থেকে জিন্দার খাঁ, আবুল খাঁ, সাগর খাঁ, মোতালেব খা. শেখ কবির ও সায়েমসহ ১০/১৫ জন এপার ফরিদপুরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ৩৮ দাগে আসেন। এসময় রাকিবকে খুঁজতে থাকেন তারা। কিন্তু প্রথমেই দেখা হয় মমিন খাঁর সঙ্গে। তাকে পেয়েই তারা মারপিট শুরু করে।

একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মমিন খাঁ। পরে এপারের লোকজন খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মমিন খাঁকে উদ্ধার করেন। লোকজনের আসা দেখতে পেয়ে জিন্দার খাঁ তার লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে মমিন খাঁকে গুরুতর আহতবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যান তিনি।

নিহত মমিন খাঁর স্ত্রী রুবা বেগম বলেন, আমার স্বামী একজন শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সে কারও সঙ্গে কোনো সময় ঝামেলায় জড়াতো না। খালে বিলে মাছ মেরে জীবিকা নির্বাহ করতাম আমরা। কোনও কারণ ছাড়াই আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে জিন্দার খাঁ ও তার লোকজন। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

তিনি আরও বলেন, আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সংসারে উপার্জন করতেন শুধুমাত্র আমার স্বামী। এখন আমি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাঁচবো কি করে? আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, তুচ্ছ একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মমিন খাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে জিন্দার খাঁ ও তার লোকজন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এভাবে একটা তরতাজা মানুষকে মেরে ফেলল এটা মেনে নেয়া যায় না। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই বিল্লাল হোসেন বলেন, ফরিদপুরের জলিল মোল্লাডাঙ্গী ও মানিকগঞ্জের নটাখোলা গ্রামের লোকদের মধ্যে পূর্বে থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মারামারির ঘটনা লেগেই থাকে। জলিল মোল্লাডাঙ্গী গ্রামের মমিন খাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছে নটাখোলা গ্রামের কতিপয় ব্যক্তি।

তিনি আরও বলেন, নিহত মমিন খাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিএ-১৮/২৯-০৯ (আঞ্চলিক ডেস্ক)