কক্সবাজারে চাঞ্চল্যকর চার খুনের রহস্য উদঘাটন

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় সংখ্যালঘু বড়ূয়া পরিবারে চার খুনের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, চাঞ্চল্যকর এ খুনের সঙ্গে জড়িত খুনিকে শনাক্ত করা গেছে। দু-একদিনের মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের অবহিত করা হবে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক টিম এ হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রয়েছেন। প্রাপ্ত আলামত এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে এ ঘটনায় সন্দেহভাজন বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে পুলিশ খুনিকে শনাক্ত করতে পেরেছে।

সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একই পরিবারের চার সদস্যকে খুনের ঘটনায় তিন-চারজন জড়িত। তাদের সঙ্গে ওই পরিবারের নিকটাত্মীয়ও রয়েছে। তাদের পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সূত্র জানায়, ডাকাতির পরিকল্পনা খুনির ছিল না। বাড়িতে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার থাকলেও কোনো মালপত্র খোয়া যায়নি। কুয়েত প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার মা খুন হওয়া সখি বড়ুয়ার গলায় দুই ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন থাকলেও খুনি তাও নেয়নি। কিন্তু বাড়ির আলমারির ড্রয়ারসহ আসবাবপত্র তছনছ করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, খুনের ঘটনাকে ভিন্নদিকে দৃষ্টি সরানোর জন্য বাড়ির মালপত্র তছনছ করেছে খুনিরা।

তদন্তের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃদ্ধ সখি বড়ূয়া তার এক সন্তান অনিষ বড়ূয়াকে প্রতিদিন খাবার রান্না করে দিয়ে আসেন। চিরকুমার অনিষ পাশের বাড়িতে থাকলেও মায়ের রান্না করা খাবারে তার জীবন চলে। ওই দিন রাতেও খাবার দিতে যান সখি বড়ূয়া। এ সময় দরজা খোলা পেয়ে ঘাতকদের একজন বাড়িতে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকে। রাতেই বাড়িতে দুই শিশুসহ সখি বড়ূয়া ও গৃহবধূ মিলা বড়ূয়াকে হত্যা করে ছাদের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।

ওই কর্মকর্তা জানান, ছাদের দরজা ভেতর থেকে খোলা হয়েছে। গাছের একটি ডাল ধরেই ছাদ থেকে ঘাতকরা নেমে গেছে। ওই গাছের ভাঙা একটি ডালও আলামত হিসেবে নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। বাড়ির পেছনে ধানক্ষেতে রয়েছে খুনিদের পায়ের চিহ্ন। ধারণা করা হচ্ছে, এখান দিয়ে খুনিরা পালিয়ে গেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, কোট বাজার স্টেশনে সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ দেখে এক খুনিকে শনাক্ত করা গেছে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, এ হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজন পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার মোটিভ জানা গেছে। হত্যাকারীদের বক্তব্যের সঙ্গে বিভিন্ন আলামত উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ। প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিত হয়ে আগামী দু-একদিনের মধ্যে গণমাধ্যমের সামনে ঘাতকদের হাজির করা হবে।

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন সমকালকে বলেন, ‘আমরা সন্দেহজনকভাবে কাউকে অভিযুক্ত করতে চাই না। কোনো নির্দোষ মানুষ অহেতুক এ ঘটনায় হয়রানির শিকার হবেন না। হত্যাকারী কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েই ঘাতকদের আইনের আওতায় আনতে চাই।’

উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের পূর্ব রত্নাপালং গ্রামে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে প্রবাসী রোকেন বড়ুয়ার বাড়িতে তার মা সখি বড়ুয়া (৬৫), স্ত্রী মিলা বড়ুয়া (২৫) একমাত্র ছেলে রবিন বড়ুয়া (৫) ও ভাতিজি সনি বড়ুয়াকে (৫) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহত মিলা বড়ুয়ার বাবা শশাঙ্ক বড়ুয়া বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি করা হয়নি।

রোকেন বড়ুয়া কুয়েত থেকে সোমবার রাতে দেশে ফিরেছেন। স্বজনদের সৎকার শেষ করে তিনি এখন বাড়িতেই অবস্থান করছেন। বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা রয়েছে।

বিএ-১৬/০১-১০ (আঞ্চলিক ডেস্ক)