হকার থেকে যেভাবে কোটিপতি যুবলীগ নেতা জাকির

একসময় মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতাদের কাছে ফেরি করে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করতেন জাকির হোসেন। এখন আর এসব করেন না। ঢাকার বনশ্রীতে তার আলিশান বাড়ি। নীলা সুপারসপ নামে বনশ্রীতে রয়েছে তার বিশাল সুপারসপ।

এছাড়াও সোনারগাঁয়ে কয়েকটি বাড়ি, সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি এলাকায় শতবিঘা জমি, ঢাকার আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানা যায়।

নারায়গঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হওয়ার পর রাতারাতি ভাগ্য বদলে গেছে জাকিরের।

জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার কান্দারগাঁও গ্রামের মোনতাজ উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন। জীবন নির্বাহের তাগিদে একসময় মাছ বাজারে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করত বলে এলাকায় তাকে ‘পলিথিন জাকির’ নামেই চেনে। পরে মেঘনা ঘাটে হকারির পাশাপাশি এলাকায় বালু ভরাট ও জমি বিক্রির দালালিও চালিয়ে যান সমান তালে।

একসময় ‘সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্পের জমি ক্রয় ও বালু ভরাটের দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে জাকির। সাধারণ মানুষের জমি দখল, ভুয়া দলিলে জমি বিক্রি এবং বালু ভরাটের টেন্ডারবাজি করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

জাকিরের নেতৃত্বে মেঘনা নদীতে চলাচলরত বিভিন্ন নৌযান থেকে চাঁদাবাজি, গণপরিবহনে ডাকাতি, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপের প্রতিবাদে এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন করলেও কোন প্রতিকার পায়নি।

দুটি হত্যা ও নৌ-চাঁদাবাজিসহ প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি পলিথিন জাকির ২০১২ সালে রিপন হত্যা, ২০১৪ সাথে সাধন হত্যা ও ২০১৫ সালে গোলজার হত্যায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি খুন হয় জাকিরের সকল অপকর্মের সাক্ষী ভাগিনা মোহাম্মদ আলী।

এলাকাবাসী জানান, চতুর জাকির তার সেকেন্ড ইন কমান্ড সাধন এবং ভাগিনা মোহাম্মদ আলীকে হত্যার আগে পরিকল্পিতভাবে অন্যকে ফাঁসিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়ের জন্য খুন হওয়ার দু-এক দিন আগে সোনারগাঁ থানায় তাদের নিরাপত্তা চেয়ে সে নিজে বাদী হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি করার দুই দিন পর সাধন এবং একদিন পর মোহাম্মদ আলীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, জাকির যদি তার কোনো আত্মীয় কিংবা তার ব্লকের নেতার নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন তাহলে স্পষ্ট যে এক সপ্তাহের মধ্যে ওই আত্মীয় কিংবা নেতা নিশ্চিত খুন হবে। তার ভাগিনা মোহাম্মদ আলী হত্যার মামলার ভয় দেখিয়ে সে কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে বলেও জানা যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়. ২০১৭ সালে মার্চ মাসে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগ সম্মেলনের মাধ্যমে তৎকালীন ২টি হত্যা মামলাসহ প্রায় ডজন মামলার আসামি জাকিরকে পিরোজপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।

অভিযোগ ওঠে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাকিরের কাছে পদ বিক্রি করেন উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার।

যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে জাকির। একই বছর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে তার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অবৈধ সুবিধা আদায় করেন।

সে বৈদ্যের বাজার খেয়াঘাটের ইজারা পাওয়ার পর তার বাহিনীর চাঁদাবাজি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক মাঝি ও গ্রামবাসী আনন্দ বাজারে চলে গেছেন।

জাকির হোসেন বর্তমানে কয়েক শ কোটি টাকার মালিক বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। ঢাকার বনশ্রীতে তার আলিশান বাড়ি, নীলা সুপারসপ নামে বনশ্রীতে বিশাল সুপারশপসহ সোনারগাঁয়ে কয়েকটি বাড়ি, ঢাকায় আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানা যায়।

বৈদ্যের বাজার এলাকার খেয়াঘাট গিয়ে জানা যায়, ‘মেসার্স পিয়াল এন্টারপ্রাইজ’ নামে বৈদ্যের বাজার থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত ইজারা নেন জাকির। অতিরিক্ত চাঁদাবাজির কারণে তার ইজারা বাতিল করা হলে ‘কান্দারগাঁও যুব কল্যাণ সমিতি’র নামে আবারও ইজারা নেন।

একই অভিযোগে তা বাতিল হলে পুনরায় ইজারা পায় কান্দারগাঁও গ্রামের একতা সংঘের সভাপতি আমজাদ হোসেন। কিন্তু ইজারার নিয়ন্ত্রণ থাকে জাকিরের হাতেই।

ইজারা বাতিল হলেও জোরপূর্বক নৌপথে চাঁদাবাজি করতেই থাকে জাকির। সোনারগাঁ উপজেলায় নৌপথের চাঁদাবাজির একচ্ছত্র অধিপতি জাকির।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নৌযান থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে জাকিরের সন্ত্রাসী বাহিনীর ২০-২৫ জনের একটি দল। যারা তিন থেকে চারটি নৌকার মাধ্যমে এ কাজ করে থাকে। প্রতিটি নৌকায় ৬-৮ জন করে থাকে। তাদের রয়েছে গজারির লাঠি থেকে শুরু করে আধুনিক অস্ত্র।

এ ব্যাপারে জাকিরের সাথে যোগাযোগ করতে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জাকিরের ছোট ভাই আল-আমিন নৌ-চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা ঠিকাদারি করে টাকা রোজগার করছি। মহাখালীতে ‘জাকির রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার কম্পানি লিমিটেড’ নামে আমাদের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে।

বিএ-১৫/০৩-১০ (আঞ্চলিক ডেস্ক)