মন পুড়ছিলো মায়ের, বার বার ফোন দিয়েও পাচ্ছিলেন না ফাহাদকে

রোববার দিবাগত রাতে অজানা শঙ্কায় মন পুড়ে যাচ্ছিলো মা রোকেয়া খাতুনের। কোন অঘটন ঘটলো কি না তা জানতে ছেলে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে বার বার ফোন দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ও প্রান্ত থেকে সাড়া পাননি।

সকালে ছেলের মৃত্যুর খবর আসে মায়ের কাছে। শোকে বিহ্ববল হয়ে পড়েন মা। সোমবার দুপুরে ফাহাদের কুষ্টিয়া শহরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয় বিদারক দৃশ্য।

ছেলেকে হারিয়ে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন মা। চেতন পেলেই শুরু হয় বিলাপ।

পরিবারের সদস্যেরা জানান, ১০ দিন আগে ছুটিতে ফাহাদ ও তার ছোট ভাই বাড়িতে এসেছিলেন।

২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন ফাহাদ। তবে সামনে পরীক্ষা, পড়া হচ্ছে না বলে রোববার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।

ছেলের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘গতকাল সকালে আমি তাকে নিজে গিয়ে বাসে তুলে দিই। সে ঢাকায় রওনা দেয়।

মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে কথা হলো আমার। বিকেল পাঁচটায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়।

এরপর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ফোন ধরেনি।’ এ কথা বলেই মূর্ছা যান রোকেয়া খাতুন।

ফাহাদের ছোট ভাই জানায়, ফোন না ধরায় সে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে তাকে নক করে। তাকে ফেসবুকে অ্যাকটিভ পাওয়া গেলেও সাড়া দেননি।

রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

বুয়েটের হল শাখার ছাত্রলীগের নেতারা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও তাকে পিটিয়ে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।

মারা যাওয়া ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। থাকতেন শের-ই বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।

ফাহাদের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক।

দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকে।

বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি।

আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার ঘটনায় তার গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

পরিবার জানিয়েছে, ফাহাদের কোনো শত্রু ছিল না। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। তাদের সন্তানকে কেন এভাবে জীবন দিতে হলো, বুঝে উঠতে পারছেন না।

ফাহাদের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, সে শিবিরের কর্মী, এমন কথা রটাচ্ছে সবাই। এটা বানোয়াট, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিংয়েও আমরা যাই। ফাহাদ এমনিতে তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পর দুই-তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল।

বিএ-১০/০৭-১০ (আঞ্চলিক ডেস্ক)