ছেলেকে নিয়ে রাজনীতি নয়, খুনিদের সাজা চাইলেন ফাহাদের বাবা

ছেলেকে নিয়ে রাজনীতি নয়, খুনিদের সাজা চাইলেন ছাত্রলীগের নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায় এই মন্তব্য করেন তিনি।

বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আবরার আমার সন্তান, সে মারা গেছে। তার নিহত হওয়ার ঘটনায় আমরা সবাই ব্যাথিত।

তবে তার হত্যাকাণ্ডকে নিয়ে কেউ রাজনীতি করুক এটা আমরা চাই না।

আমাদের সকলের চাওয়া তার হত্যার সঙ্গে জড়িতের গ্রেফতার করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সাজা নিশ্চিত করা।’

তিনি বলেন, এখন প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে আমরা খুশি। খুনিদের সঠিক বিচার হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। এ জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।

এ সময় অমিত সাহা গ্রেফতারে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান আববার ফাহাদের বাবা।

ছেলেকে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ফাহাদ কেন হত্যা করা হয়েছে তা আমরা জানি না।

হত্যার পর বিষয়টি ভিন্নখাতে নিয়ে এটিকে ধামাচাপা দিতে তার রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়া হয় যে সে শিবির করে। বিষয়টি আদৌও ঠিক নয়।

তিনি বলেন, ফাহাদ এখন আমার একার সন্তান নয়, সারা দেশের মানুষের সন্তান। এখন কোন সিদ্ধান্ত আমি একা নিতে পারি না।

ছাত্ররা যেসব যৌক্তিক আন্দোলন করছে তা বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। দেশের সেরা বিদ্যাপিঠগুলো যদি নিরাপদ না হয় সেখানে কেউ সন্তান দিতে চাইবেন না।

তাই সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের বিবৃতি ও তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে ফাহাদের বাবা বলেন, স্বাধীন তদন্ত কমিটি করার প্রয়োজন বলে আমি করি।

এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। পাশাপাশি হলগুলোতে লেখাপড়ার পরিবেশ নিশ্চিত হয় সে বিষয়টি নজর দেয়া দরকার।

বরকত উল্লাহ বলেন, ফাহাদর মারা গেছে, বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন হচ্ছে সেটা ঠিক আছে, তবে আমরা ছেলেকে নিয়ে আমরা কোন রাজনীতি করছি না, কেউ রাজনীতি করুক আমরা সেটা চাই না। ’

প্রধানমন্ত্রী যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন আমরা খুশি। তার ওপর আস্থা আছে। দ্রুত বিচার শেষ দেখতে চাই। একজন খুনিও যেন পার না পায়।

কোন চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন চাপ নেই, অনেকেই আসছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে ভিসি বাড়ি পর্যন্ত না এসে ফিরে যাওয়ায় তিনি কষ্ট পেয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ফাহাদ বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তার মা এবার মাংস ও রুটি তৈরি করে দিয়েছিল। সেই খাবারও সে ঠিক মতো খেতে পারেনি। খাওয়ার আগেই তাকে পিটিয়ে মারা হয়।

তার কক্ষে একটি বাক্সসহ ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ছিল। ল্যাপটপটি পাওয়া যায়। মোবাইল দুটি শিক্ষকের কাছে রয়েছে। তার ব্যবহৃত বাক্সটি বাইরে ছিল।

আমি লাশ আনতে গেলে তার কক্ষে একবারের জন্য যাই। সেখানে তার জিনিসপত্র সব পড়েছিল। এসব স্মৃতি হিসেবে ফেরত চাই।

এ সময় ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, এক ছেলেকে হারিয়েছি। আরেক ছেলেকে হারাতে চাই না। আববার ফাহাদ হত্যার সঠিক বিচার চাই। খুনিরা যেন পার না পায়।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসের জেরে আবরার ফাহাদকে গত রোববার রাতে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর তাকে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে কয়েক ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ওইদিন রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির করিডোর থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন সোমবার রাতে নিহত ফাহাদের বাবা বরকতুল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে ওই রাতেই হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।

ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১১ নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

বিএ-১৬/১০-১০ (আঞ্চলিক ডেস্ক)