নুসরাতের খুনিদের ফাঁসি নয়, পুড়িয়ে মারার দাবি মায়ের

দেশের বহুল আলোচিত সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হতে পারে বৃহস্পতিবার।

ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ওই বিচারক রায়ের তারিখ ঘোষণা করেন।

নুসরাত হত্যা মামলার রায়কে ঘিরে ফেনী ও সোনাগাজীতে বিভিন্নস্থানে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে নুসরাতের হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি দেখে যেতে চান নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। রায়ের পর পরিবারের সদস্যদের বাড়তি নিরাপত্তাও চান তিনি। এ ছাড়া রায়ের দ্রুত কার্যকরও চান তিনি।

চলতি বছরের ১০ এপ্রিল পাঁচদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পোড়া যন্ত্রণা ভোগ করে না ফেরার দেশে চলে যান যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদের কারণে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে দেয়া ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।

তার পোড়া যন্ত্রণা নিয়ে চলে যাওয়ার সেই স্মৃতি গত ছয় মাসে একমুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন মা শিরিন আক্তার।

তিনি বলেন, ‘ঘুরে-ফিরে চোখের সামনে ভাসে ঝলসে যাওয়া নুসরাতের সেই বীভৎস ছবি, মেয়ের শরীরের পোড়া গন্ধ এখনও নাকে এসে লাগে। আমি ঘুমাতে পারি না।’

বুধবার দুপুরে ফেনীর সোনাগাজী পৌর এলাকার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে গেলে শিরিন আক্তারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

গলার কাছে, বুকের ভেতর দলা পাকিয়ে ওঠা যন্ত্রণা আড়াল করে মেয়ের স্মৃতিচারণ করতে থাকেন পঞ্চশোর্ধ্ব এই নারী। তবে ক্ষণে ক্ষণে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শিরিন আক্তার বলেন, ‘সেই ঘটনা সারাক্ষণ মনে ভাসে, শরীর ভারি হয়ে আসে। চলাফেরা করতে পারি না। ওই ঘটনার পরপরই মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।’ তবে কোনো ডাক্তারের কাছে যাননি বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যা মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন ‘আমি চাই, অভিযুক্ত প্রত্যেক আসামির সর্বোচ্চ সাজা হোক।’

শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়েকে ঘাতকরা যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তেমন কঠিন সাজা যেন দেয়া হয় অভিযুক্ত প্রত্যেক আসামিকে। তাদের ফাঁসি দিলে তারা বিনা যন্ত্রণায় মরে যাবে। তাদেরও আমার মেয়ের মতো পুড়িয়ে সাজা কার্যকর করলে মৃত্যুর যন্ত্রণা বুঝতে পারত।’

নুসরাতের মৃত্যুর পর থেকে তার শয়নকক্ষে খাটের ওপর শুয়ে-বসে আহাজারি করেই সময় কাটে শিরিন আক্তারের। ঘোরলাগা চোখে তিনি বলেন, রাতে তন্দ্রায় চোখ জুড়িয়ে এলে নুসরাতের মা মা ডাকে তন্দ্রা ছুটে যায়। তারপর আমার মেয়েটাকে খুঁজতে থাকি।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন।

এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যান নুসরাত।

এ সময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

বিএ-০৫/২৩-১০ (আঞ্চলিক ডেস্ক)