মসজিদ থেকে ডেকে এনে মৎস্যচাষিকে গাছে বেঁধে নির্যাতন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে এক মৎস্যচাষিকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মৎস্য খামার দখল করে ওই মৎস্যচাষিকে উল্টো চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু তাই নয় নির্যাতনকারীরা হুমকি দিয়েছে- একটি মামলা করলে ১০টি মামলা করা হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে এলাকা ছাড়া করা হবে। পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি তাদের পকেটে রয়েছে।

এ নিয়ে পুলিশের কাছে সহযোগিতা না পেয়ে সোমবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন করেছেন নির্যাতনের শিকার মৎস্যচাষি মজনু চৌধুরী। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলার আতলাপুর গ্রামের মৃত রমিজ উদ্দিনের ছেলে।

মজনু চৌধুরী অভিযোগ করেন, তিনি মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। জীবিকার প্রয়োজনে কৃষি কাজ, মাছ চাষ ও তরিতরকারি চাষ করেন। বাড়ির মালিক মিজানুর রহমান ও স্ত্রী মেহেরুন্নেছা মারা যাওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার মজিবুর রহমানের ছেলে মাহাবুর, মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে আকবর মিয়া, আইয়ুব মিয়া, ইয়ানুছ মিয়ার ছেলে মাজাহারুল ও নাজমুলসহ তাদের নিয়োজিত সন্ত্রাসী বাহিনী বাড়িঘর দখল করতে তাকে (মজনু চৌধুরী) নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে আসছে।

মজনু চৌধুরী বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাদশা সরকারদের কাছ থেকে ৪ বিঘার পুকুর, মামুন ভূঁইয়ার এক বিঘার পুকুর ও আরিফ সরকারের এক বিঘার পুকুর বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করে করেন। পুকুরের চারপাশে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করেন তিনি।

গত ৩ মাস আগে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা এক বিঘার একটি পুকুর দখল করে নেয়। বাকি দুটি পুকুরের মাছ ধরে বিক্রি করে দেয়। পুকুর পাড়ে চাষ করা লাউসহ সবজি গাছ কেটে ফেলে। পুকুরে গেলেই মজনু চৌধুরীকে হত্যা ও হামলার হুমকি দেয় তারা। এসব ব্যাপারে একাধিকবার ভোলাব তদন্ত কেন্দ্র পুলিশকে অবহিত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এদিকে গত এক মাস আগে অপর একজনের একটি পুকুরে মাছ চুরির দায়ে চারিতালুক এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে মাছসহ জাল গলায় পেঁচিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালায় সন্ত্রাসীরা।

পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সন্ত্রাসীরা ফজরের নামাজরত অবস্থায় মসজিদ থেকে ডেকে নিয়ে এসে মোশারফ হোসেনের সঙ্গে মজনু চৌধুরীকেও চুরির অপবাধ দিয়ে নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে নির্যাতনকারীরা হুমকি দিয়ে বলে, একটি মামলা করলে মৎস্য ১০টি মামলা দেয়া হবে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে এলাকা ছাড়া করা হবে, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি তাদের পকেটে রয়েছে।

পরে পরিবারের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় মজনু চৌধুরীকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করে।

একমাস চিকিৎসার পর বাড়িতে এসে সোমবার (১১ নভেম্বর) নির্যাতনের বিচার, ঋণ নিয়ে চাষ করা মাছের পুকুর ফেরত এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মজনু চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগমের কাছে অভিযোগ দেন। এ সময় ইউএনও মমতাজ বেগম এর সঠিক বিচার ও চাষ করা পুকুর ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।

এ ব্যাপারে ভোলাব তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইউএনও মমতাজ বেগম বলেন, অভিযোগটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানকে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা না নিলে সরেজমিনে এসিল্যান্ডকে পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুলুমবাজ-দখলবাজদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

রূপগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বিএ-০৩/১১-১১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)