তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষে বহু হতাহত

দেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া দুইটি ট্রেনের সংঘর্ষে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক যাত্রী।

নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান।

ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে এখনও ছয় জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়ান গেছে তারা হলেন- চাঁদপুরের পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের মুজিবুর রহমান (৫৫) ও কুলসুম বেগম (৩০), হবিগঞ্জ সদরের ইয়াসীন (১২), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সুজন আহমেদ (২৮), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের আল আমীন (৩০), হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনোয়ারপুর পৌরসভার আলী মোহাম্মদ ইউসূফ (৩২), হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের শিশু আদিবা (২), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের শিশু সোহামনি (২) ও মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০)।

মঙ্গলবার ভোররাত সোয়া তিনটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

রেলওয়ে পুলিশের আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি দাস জানিয়েছেন, তূর্ণা নিশীথার ধাক্কায় উদয়ন এক্সপ্রেসের মাঝের দুইটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এসব বগির নীচে কেউ আটকে পড়ে আছে কিনা তার অনুসন্ধান চলছে।

সংকেত বিভ্রাটে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।

তূর্ণা নিশীথার একজন যাত্রী ইজতিহাদ মাশরুর ঘটনাস্থল থেকে বিবিসি বাংলাকে বলছেন, উদয়ন এক্সপ্রেসের মাঝ বরাবর দুইটি বগি দুমড়ে মুচড়ে রয়েছে।

দুর্ঘটনাটি ঘটার সময় ট্রেন দুইটি চলন্ত অবস্থায় ছিল।

এই ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট-চট্টগ্রামের মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ও আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনার ৮ ঘণ্টা পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দুটি উদ্ধার করা হলে এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায় তূর্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয় বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মিয়া জাহান।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে বোঝা গেছে, তূর্ণা এক্সপ্রেসের চালক সিগন্যাল অমান্য করে ভুল লাইনে চলে যাওয়ার দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণে ওই ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালক (গার্ড) তিন জনকেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কসবায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তুর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।

চট্টগ্রাম থেকে তূর্ণা নিশিথা ট্রেনে করে ঢাকা আসছিলেন মোকাম্মেল হক খান। হঠাৎ বিকট শব্দ আর ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙে তার। ঘুম ভাঙার পর লক্ষ্য করলেন ট্রেনটি থেমে গেছে। কী হয়েছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আশপাশের যাত্রীরাও তখন বেশিরভাগ ঘুমে ছিলেন। সবার জিজ্ঞাসু চোখ। কী ঘটেছে?

‘ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৩টার কিছু বেশি হয়েছে সময়। কোথায় আছি কিছুই ঠাহর করতে পারছিলাম না। চারদিকে অন্ধকার। তবে আমাদের বগির লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল’।

পরিস্থিতি বুঝতে এরপর যাত্রীরা একে একে নামতে থাকেন ট্রেন থেকে। অন্যান্য বগি থেকে কান্না-চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পান তারা। বড় কিছু ঘটেছে বুঝতে আর বাকি থাকে না।

মোজাম্মেল বলেন, ‘চিৎকার শুনে সামনে এগিয়ে যাই। গিয়ে যা দেখি তা বর্ণনা করার মতো নয়। অন্ধকারের মধ্যে দেখি ট্রেনের বগি উল্টে গেছে। মানুষজন পড়েন আছেন চারদিকে। আমি অন্তত ২০ জনকে দেখেছি পড়ে থাকতে। কী করবো বুঝতে পারছিলাম না।’

কিছুক্ষণের মধ্যে অন্যান্য বগির লোকজন জড়ো হতে থাকেন। সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। রেললাইনের আশপাশের বাড়িঘর থেকেও মানুষজন জড়ো হতে থাকেন। ‘আধা ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয়রা এবং সুস্থ যাত্রীরা মিলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। এরপর পুলিশ ও রেলের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন’।

‘কত লোক অসহায়ভাবে পড়ে ছিলেন। কারো হাত নেই। কারো পা নেই। কয়েকটি দেহ নিথর হয়েছে আছে দেখেছি। আহতদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠছিল’। কর্তৃপক্ষের উদ্ধার অভিযান শুরুর পর তিনি বাসে করে নিরাপদে ঢাকায় ফিরেছেন।

এদিকে এই ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ করে টাকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরর তিনি এ কথা জানান।

এসএইচ-০৪/১২/১৯ (আঞ্চলিক ডেস্ক)