গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে নিহত ৭ : চউকের বিধিমালা না মেনেই তৈরি ভবনটি

চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার যে ভবনটিতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে সেটি ওই এলাকায় ‘বড়ুয়া ভবন’ নামে পরিচিত। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটি চউকের বিধিমালা না মেনেই তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাঁচতলা ভবনটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) বিধিমালা না মেনেই তৈরি করা হয়েছে। ভবনের নিচে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে সেফটি ট্যাংক।

শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘চউক বিধিমালায় বলা হয়েছে, মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট দূরত্বে ভবন করতে হবে। কিন্তু এ ভবনটি সেই বিধিমালা মানেনি।’

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে ভবনের গ্যাস লাইনের রাইজার (গ্যাসের চাপ নিয়ন্ত্রক) বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। আর এ কারণেই দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটে।’

তিনি বলেন, ‘ভবনের ব্যবহারকারীরা ছিলেন একেবারেই অসচেতন। রাস্তার সঙ্গে লাগোয়া একটি রান্না ঘরের সঙ্গেই গ্যাস লাইনের রাইজারটি লাগানো ছিল। এমনকি রাইজারটিতে মরচে ধরে গিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা রাইজারটি উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহসিন সাহেবকে বুঝিয়ে দিয়েছি। এই ভবনটি ছিল অনেক পুরনো, ভবন মালিক এটি নির্মাণে কোনো নিয়মই মানেননি। তাই এখন ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। নির্দেশ পেলে ফায়ার সার্ভিসও একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, এরপরই ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

রোববার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা এলাকার ব্রিকফিল্ড রোডে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আহতদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে সব সেবা সংস্থার সদস্যদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

নগর পুলিশ কর্মকর্তা শাহ্ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে ওই ঘরের গৃহিণী অর্পিতা দাসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তার পরিবার তারা তিন সদস্য। সকালে দুর্ঘটনার সময় বাকি দুইজন বাইরে ছিলেন। ৯টার দিকে সকালের রান্না বসাতে গিয়ে গ্যাসের চুলা জ্বালাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদ আব্দুর রউফ আরও বলেন, ‘মূলত বিস্ফোরণের কারণে দেয়াল ধসের ঘটনা ঘটেছে। একটি বহুতল ভবনের নিচে থাকা বেশ কয়েকটি দোকানের কর্মচারী ও পথচারীরা আহত হয়েছেন। এখানে বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার চাইতে দেয়াল চাপায় বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’

ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি বলেন, পাথরঘাটায় গ্যাস লাইনের রাইজার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছ। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থল থেকে ১৪ জনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণে একটি দেয়াল ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

বিএ-০৫/১৭-১১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)