কিশোরগঞ্জে ছেলের অপরাধে কারাগারে মা

‘আমি গাঁজার ব্যবসা করি না, গাঁজা কি চিনি না। আমি বিধবা, গরিব মানুষ। ছয় ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালাই। আমি নির্দোষ, আমাকে ছেড়ে দিন।’

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বুধবার সকালে ভৈরব থানা হাজতে কেঁদে কেঁদে পুলিশের কাছে এমন মিনতি করেন শেফালী বেগম। তিনি ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা।

শেফালী বেগম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সাদা পোশাকের লোকজন বাড়ি এসে ঘরে গাঁজা পেয়েছে দাবি করে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু গাঁজা কি তা আমি চিনি না। এখন আমার সন্তানদের কি হবে।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার রাতে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ শেফালী বেগমকে গ্রেফতার করে। রাতেই শেফালীকে ভৈরব থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে শেফালীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শেফালী বেগম ২০০ গ্রাম গাঁজা বিক্রির উদ্দেশ্যে ঘরে রেখেছিলেন। ওই গাঁজাসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। সকালে তাকে কিশোরগঞ্জ আদালতে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

শিবপুর ইউনিয়নের মেম্বার মো. লিল মিয়া বলেন, শেফালী বেগম নিরীহ মানুষ। বিধবা হওয়ার পর ছয় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালান। তিনি গাঁজার ব্যবসা করেন বিষয়টি সঠিক নয়। তবে তার ছেলে সজীব গাঁজা খায়- এটা সবাই জানে।

শেফালী বেগমের প্রতিবেশী মো. কাইয়ুম মিয়া বলেন, শেফালী বেগম নিরীহ মানুষ। তিনি বৃদ্ধা। আমাদের সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তার। তাকে কখনো গাঁজা বিক্রি করতে দেখেনি কেউ। শেফালীর গাঁজা বিক্রির ঘটনা পুরাই মিথ্যা।

শিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায় মাদকের হাট। আসল মাদক ব্যবসায়ীদের না ধরে নিরীহ একজন বৃদ্ধাকে ধরে নিয়ে গেল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। ২০০ গ্রাম গাঁজা কোনো মাদক বিক্রেতা ঘরে রাখে না, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। যারা মাদক বিক্রি করে কয়েক কেজি গাঁজা ও শত শত ইয়াবা থাকে। এই নিরীহ বৃদ্ধাকে মাদক মামলায় জড়ানো অমানবিক।

শেফালী বেগমের ছেলে সজীব বলেন, ‘আমি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। মাঝে মধ্যে গাঁজা খাই। অভ্যাস ছাড়তে পারি না। জব্দকৃত ২০০ গ্রাম গাঁজা আমি ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমার মা গাঁজা চেনেন না। ব্যবসা করার প্রশ্নই আসে না। ঘটনার দিন আমি বাসায় ছিলাম না। সাদা পোশাকের লোকজন অন্যায়ভাবে আমার মাকে ধরে নিয়ে গেছে। গাঁজার জন্য আমাকে গ্রেফতার করুক, কিন্তু আমার বৃদ্ধা মাকে কেন গ্রেফতার করল তারা।’

এ বিষয়ে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে শেফালী বেগমের বাসায় অভিযান চালিয়ে গাঁজাসহ গ্রেফতার করা হয়। বিক্রির জন্য ওসব গাঁজা ঘরে রেখেছিলেন তিনি।

২০০ গ্রাম গাঁজা কোনো মাদক ব্যবসায়ী ঘরে রাখেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদুর রহমান বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সবসময় মিথ্যা কথা বলে। তাদের কথা বিশ্বাস করতে নেই।

বিএ-০৬/২৭-১১ (আঞ্চলিক ডেস্ক)