সেই যাত্রী রাণী শ্রেষ্ঠ জয়িতা

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন হাজার টাকা আয় করা যাত্রী রাণী দত্ত।

সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে জেলা মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত জয়িতাদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পান তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু তারেক, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে সুনামগঞ্জ জেলার ৫ জন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিরা। শ্রেষ্ঠ ৫ জয়িতা হলেন, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু ক্যাটাগরিতে যাত্রী রাণী দত্ত, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে নাসরিন আক্তার খানম, সফল জননী ক্যাটাগরিতে লক্ষী রাণী ও ফরিদা বেগম।

উল্লেখ্য, গেল ১৩ মার্চ জাগো নিউজে যাত্রী রাণী দত্তকে নিয়ে অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন হাজার টাকা আয় রাণীর শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে আলোচনা আসেন তিনি। ভালোবেসে বিয়ে করেন হৃদয় দত্তকে। কিন্তু ভালোবাসার বিয়ে মেনে নেয়নি হৃদয় দত্তের পরিবার। বিয়ের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও যাত্রী রাণী দত্ত পাননি শ্বশুর-শাশুড়ির ভালোবাসা।

নাতি-নাতনির মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না তারা। কিন্তু স্বামীর ঘরেও সুখ হয়নি তার। বিয়ের এক মাস কাটতে না কাটতে স্বামী হৃদয় দত্ত তাকে মারধর করেন। তাকে রোজ মারধর করতেন। এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করলেই তাকে নির্যাতন করেছেন। যখন বড় ছেলের জন্ম হয়েছে তখন পাশে পাননি স্বামীকে।

একাই হাসপাতালে গেছেন, সেখানে বাচ্চা প্রসবের পর একাই বাসায় এসেছেন। এখন তিন সন্তানের মা যাত্রী রাণী দত্ত। তার এক ছেলে দুই মেয়ে। সংসারের সব খরচ তার স্বামীই চালাতেন।

তবে তিনি নিয়মিত কাজ করেন না। পরে যাত্রী রাণী সিদ্ধান্ত নেন কিছু একটা করবেন। এরপর তিনি স্বামীর কাছ থেকে অটোরিকশা চালানো শিখেন এবং গত ৭ মার্চ তিনি অটোরিকশা নিয়ে প্রথমবার শহরে বের হন এবং এখন পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে জীবন-যাপন করছেন।

শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পাবার পর যাত্রী রাণী দত্ত বলেন, এ সম্মাননা সকল নারীর সাহস জোগাবে। একজন নারী যে পুরুষ থেকে পিছিয়ে থাকতে পারে না এবং নারীও যে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে পারে এটাই বড় উদাহারণ। আজকে যে সম্মাননা আমাকে দেয়া হয়েছে আমি তা কোনোদিন ভুলবো না।

বিএ-১৪/০৯-১২ (আঞ্চলিক ডেস্ক, তথ্যসূত্র: জাগো নিউজ)