নির্মাণকাজ শেষেই ধসে পড়ল কলেজের ছাদ

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার পুরান বাউশিয়া এলাকায় প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজ শেষ না হতেই পাঁচ তলার ছাদ ধসে পড়েছে।

ছাদ ঢালায়েই দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় তা ধসে পড়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।

এ ভবন নির্মাণ বিষয়ে অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রকৌশলীদের দুর্নীতি তদন্ত করে দেখতে দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাঁচ তলার ছাদের বড় একটি অংশ ধসে পড়েছে। সেই ধসেপড়া অংশের সব রড ও রিং পাঁচতলায় বাকি অংশে রাখা হয়েছে।

পুরো বিল্ডিংটিতে দেখা যায়, ভিত্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে প্রি-কাস্ট কংক্রিট পাইল। প্রতিটি ফুটিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি করে পাইল, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট করে। তবে দেখা যায়, ৪৫ ফুট পাইলের কোনটি মাটিতে মাত্র ১৭ ফুট, কোনটি ২৪ ফুট আবার কোনোটি ৩০ ফুট পোতা হয়েছে। পাইলের বাকি অংশ কেটে ওপর থেকে সমান করা হয়েছে। এ অবস্থায় কাঠামোর স্থায়িত্ব আর কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের প্রশ্ন।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রথম থেকেই এ ভবন নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজে চরম অনিয়ম করতে দেখেছি আমরা। যে কোনো ভবনধসে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করা হয়েছিল। আর সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো।

২০১৮ সালের ২৮ মার্চ কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে ছাদের ঢালাই শেষ হয়। আর শুরুতেই এ ধসের ঘটনা ঘটল।

পাইলের দায়িত্বে থাকা রাজমিস্ত্রি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের কোম্পানি যে পাইল দিয়েছে, আমরা তাই দিয়ে কাজ করেছি। আমাদের এতে কিছু করার নেই।

বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে জানালে তারা বলেন, যে পাইল ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। তা ছাড়া ৪৫ ফুটের পাইলকে ১৭- ২৫ ফুট গভীরে পোতা হলে তা সঠিক পরিমাণ লোড বহন করতে পারবে না।

এ বিষয়ে জানতে সাইট অফিসে গিয়ে নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢালী কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়।

তবে সংবাদকর্মীর উপস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং কাজের কোনো তথ্য দেয়া হবে না বলে জানান।

এ সময় সাইট ইঞ্জিনিয়ার বিল্লাল হোসেন জানান, ছাদধসে পড়ার কোনো ঘটনাই এখানে ঘটেনি। ছাদধসে পড়ার পর স্তূপ করে রাখা ইট, বালু, সিমেন্ট ও রডের ছবি ক্যামেরা থেকে মুছে ফেলতে বলেন তিনি।

ছাদধসে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে ফোরম্যান জহিরুল ইসলাম জানান, ছাদ ঢালাই কাজে ব্যবহৃত কাঠ ও বাঁশ ভেঙে পড়ায় ছাদধসে পড়েছে।

বিএ-০২/১৪-০২ (আঞ্চলিক ডেস্ক)